GuidePedia

0
সূর্যকর স্নানের (Sun Bath)  উপকারিতা....


 এই পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহে যত শ্রেণীর জীব রয়েছে, প্রত্যেকের জীবনের মূল উৎস হল সূর্য । 

সূর্যরশ্নী আমাদের দেহের ত্বকের উপর পড়লেই  একটি সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ সাধিত হয় । সূর্যরশ্নী যে কেবল চামড়ার উপর প্রভাব বিস্তার করে তা নয় , এই রশ্নী চামড়া ভেদ করে একেবারে দেহের ভেতরে চলে যায় । সেখানে সূর্যরশ্নী  শোষিত হয় রক্তের সাহায্যে । তার ফলে সমস্ত জীবকোষ অত্যন্ত উদ্দীপিত হয়ে পড়ে এবং দেহে ভাঙ্গা গড়ার  (metabolism) কাজ যথেষ্ট উন্নতি লাভ করে । এতে আমাদের শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট বেড়ে যায় । 
সূর্যরশ্নীতে বিদ্যমান দৃশ্যমান সাতটি রং যেমন , বেগুনী, নীল, আকাশী, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল  আমাদের দেহের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে কাজ করে । এছাড়া অদৃশ্য বর্ণালীতে বিদ্যমান রেডিও , ইনফারেট, গামা, এক্সরে, ইত্যাদি রশ্নীসমুহও বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে । প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত রং ও আলো দ্বারা মানুষের চিকিৎসা করার যে একটি পদ্ধতি গড়ে উঠেছে তাকে Light Therapy বা Cromo Therapy বলে ।
বিজ্ঞানীদের অভিমত, নিয়মিত সূর্যরশ্নী দেহে লাগলো রক্তে শ্বেত ও লাল কণিকার সংখ্যা বেড়ে যায় । ফলে শরীরের ভেতরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় । এছাড়াও এই রশ্নি চামড়ার সাথে বিক্রিয়া করে দেহে ভিটামিন-ডি উৎপন্ন করে । সুতরাং সূর্যরশ্মি মানবদেহের জন্য নানাবিধ কল্যাণ বয়ে আনে ।


বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন , যে সমস্ত ফল গাছের পাতার নিচে জন্মে  অর্থাৎ সূর্যরশ্মি পায়না , সেই ফলগুলো  নিয়মিত সূর্যরশ্নীর  মধ্যে বেড়ে ওঠা ফলগুলির তুলনায় ভিটামিন-সি সহ অন্যান্য ভিটামিনের পরিমাণ কম থাকে । একইভাবে বদ্ধ ঘরে লালিত-পালিত ফার্মের গরুর দুধের  তুলনায় উন্মুক্ত মাঠে ময়দানে বিচরণ করা কৃষকের গরুর দুধে ভিটামিন ডি ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ বেশি থাকে । ছায়ার মধ্যে বেড়ে ওঠা শাকসবজির তুলনায় সূর্যের আলোতে বেড়ে ওঠা শাকসবজিতে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে ।‌ গাছপালাও সূর্যরশ্নী থেকে যে শক্তি সংগ্রহ করে, সেটাই পরে সঞ্চিত হয় ফলমূল ও খাদ্য শস্য । মাংসভোজী প্রাণী এই শক্তি সংগ্রহ করে তৃণভোজী প্রাণীর মাংস থেকে । এই কারণে বলা হয় , Food is  simply sunlight in cold storage. অর্থাৎ আমাদের খাদ্য দ্রব্য হিমঘরে রাখা সূর্যরশ্নী ছাড়া আর কিছু নয় ।

সূর্যরশ্নী স্নানের পদ্ধতি :
শীতকালে সকাল এগারোটা এবং গ্রীষ্মকালে সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত সূর্যস্নান করা যেতে পারে ।
১ - অধিক কল্যাণের জন্য শরীরকে অনাবৃত রাখা প্রয়োজন । তাই একটি হাফ প্যান্ট পড়ে যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়া যায় অথবা বাড়ির ছাদে এটি করা যেতে পারে ।
২ - মুখমন্ডল ও কাঁধ পর্যন্ত পানি দ্বারা ধৌত করে মাথা একটি গামছা দ্বারা ঢেকে রাখতে হবে । কারণ অধিক উত্তাপ মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর ।
৩ - যাদের সূর্যের আলো সহ্য হয় না তারা সমস্ত শরীরে তৈল মালিশ করে নিতে পারেন 
৪- সূর্যের দিকে তাকানো ঠিক হবে না কারণ এতে চোখের ক্ষতি হতে পারে ।
৫- দেহের সামনের অংশে  দুই মিনিট এবং তারপর দেহের পিছনের অংশ দুই মিনিট সূর্যের আলোতে রাখতে হবে । এইভাবে কয়েকবার করা যেতে পারে ।
৬‌ - প্রথম অবস্থায় অল্প সময়ের জন্য এই কাজটি করতে হবে অর্থাৎ দুই দফায় মোট ৮ মিনিট করা যেতে পারে কিন্তু পর্যায়ক্রমে তা দীর্ঘায়িত করে ৩০ মিনিট পর্যন্ত করা যেতে পারে । 
৭ - প্রথমদিকে শরীরের রং কিছুটা কালো হতে পারে কিন্তু পরবর্তীতে চামড়ার উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে এবং পুর্বর চেয়ে বৃদ্ধি পাবে ।

সূর্যরশ্নী স্নানের উপকারিতা সমূহ:

১- ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে:
করোনা ভাইরাসর ন্যায় অন্যান্য  কিছু রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে দেহের ভাঙ্গা গড়ার কাজ (metabolism) ও দেহের দহন ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে ।  সূর্যকর স্নান দেহের metabolism  প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে । তাছাড়া চামড়ার উপরে যে সমস্ত ভাইরাস থাকে সে গুলোকে সূর্য রশ্নির আল্ট্রাভায়োলেট  রে মেরে ফেলে । যেকোন রোগ দুর্বলকে ধরাশায়ী করে এবং শক্তিশালীর নিকট পরাস্ত হয় ।

২-অজীর্ণ ও চামড়ার রোগে :
দীর্ঘ সময় ধরে অজীর্ণ রোগে ভুগলে চামড়া প্রায়  শুকিয়ে যায়, শক্ত হয়ে যায় ও চামড়ার উজ্জ্বলতা  কমে পায় । প্রতিদিন নিয়ম অনুসারে অল্প অল্প করে সময় বাড়িয়ে নিয়ে 30 মিনিট পর্যন্ত সূর্যকর স্নান করলে চামড়া পূনরায় সিক্ত হয়, শুকনা  থাকে না এবং নরম ও সতেজ হয়ে উঠে । বাজ পড়া  চামড়া পর্যন্ত সমান ও স্বাভাবিক হয়ে যায় ।

৩-রিকেটে আক্রান্ত হলে
আমাদের দেশে বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাড় ক্ষয় একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা । এই রোগে সূর্যরশ্নী সর্বাপেক্ষা কার্যকরী উপাদান । নিয়মিত সূর্যকর স্নান ‌ শরীরে ক্যালসিয়াম , ফসফরাস ও ভিটামিন -ডি  উৎপাদন বৃদ্ধি করে । এই তিন  উপাদান হাড় গঠনের প্রধান উপাদান , যা হাড়কে মজবুত করে তোলে ।তাই  হাড় ক্ষয়, সন্ধি ও গ্রন্থির টি,বি, সূর্য  রশ্নী প্রয়োগে ভালো ফল দেয় ।
৪-নানাবিধ রোগে:
হাঁপানি, দুর্গন্ধযুক্ত ঘা , রক্তশূন্যতা, জন্ডিস, ডায়াবেটিস, শারীরিক দুর্বলতা, শরীরের চর্বি হ্রাস করা ইত্যাদি রোগে সূর্য কর স্নান কল্যাণকর ভূমিকা পালন করে ।

তাই লক ডাউনের এই সময়টাতে নিয়মিত ইহা প্রাকটিস করলে একদিকে যেমন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদে নানাবিধ কল্যান নিশ্চিত করা যাবে ।

Post a Comment

 
Top