GuidePedia

0
Bangabondhu 1 Exclusive

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র স্যাটেলাইট বিবি-১ লঞ্চ হবার আগে ও পরে ফেসবুক ময় স্যাটেলাইট এক্সপার্ট দের নানারকম সত্য মিথ্যা তথ্য দেখতে দেখতে যখন জনগণ ত্যাক্ত বিরক্ত সেই বিরক্তি ভাব আরেকটু বাড়াতে আজকে আমি স্যাটেলাইট নিয়ে নিজের সল্প পরিসরের জ্ঞান এবং সামান্য রিসার্চের ফলাফল আপনাদের সাথে শেয়ার করতে আসছি। বিভিন্ন ডিফেন্স গ্রুপ,পলিটিকাল পেইজ এবং নানা রকম নিউজ পোর্টাল সুত্রে যেই জিনিশ টি সবচেয়ে বেশি এসেছে সেটি হলো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনে আমাদের লাভের তুলনায় ক্ষতি বেশি হবে। তবে এর বিপরীত ছবিও অনেকে দেখিয়েছেন। আমি আর্থিক লাভ ক্ষতির বিষয়ে যাব না কারন তার জন্য আমাদের ইকোনমিক এক্সপার্ট ওয়াসি ভাই আছেন যিনি ইতিমধ্যে এর আর্থিক লাভক্ষতি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করেছেন। তাই আমি আজ এর ব্যবহারিক দিক এর কৌশলগত গূরুত্ব গুলো তুলে আনার চেষ্টা করবো। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের পর পর অনেকে অনেক কিছু বললেও আমি এটি নিয়ে পোস্ট করিনি কারন আমার এর বেপারে বিস্তর ধারনা লাভের ইচ্ছা ছিল। () তবে যাই হক আগেই বলে নিচ্ছি আমি কোন স্যাটেলাইট এক্সপার্ট নই বরং আর আট দশজন ফেসবুক স্যাটেলাইট এক্সপার্ট এর চেয়েও হয়তো কম জানি। তাই মুল আলোচনায় যাবার আগে কোন রকম ভুল ত্রুটির জন্য অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।


আমার এই পোস্টটি চারটিঅংশে বিভক্ত যথারীতি

১) আমাদের স্যাটেলাইট এর উৎক্ষেপন পরিকল্পনা এবং এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সমুহ যা আমাদের মোকাবেলা করতে হয়েছে।

২)স্যাটেলাইট এর ব্যবহার এবং প্রযুক্তিগত দিক।

৩) স্যাটেলাইটির কৌশলগত ব্যবহার।

৪) কিছু ভুল ধারনার সমাধান।


প্রথমেই আসছি স্যাটেলাইট এর প্রাক পরিকলনা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এবং তার সমাধান নিয়ে

আমাদের স্যাটেলাইট টি উৎক্ষেপনের ক্ষেত্রে প্রথম যে প্রতিবন্ধকতা বিষয় টি সামনে আসে তা হলো এর অরবিটাল স্লট বা কক্ষপথ নিয়ে। বাংলাদেশ যথারীতি আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে ১০২ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ আবেদন করে এবং তাতে ২০টি দেশ আপত্তি জানায় এখন কথা হলো কেন তারা আপত্তি জানিয়েছিল? অনেকেই দেখলাম এটি রাজনৈতীক ভাবে দেখছে কিন্তু আন্তর্জাতিক নিয়ন অনুসারে মহাকাশে একটি স্লট বরাদ্দ পেতে হলে সেখানে অন্যান্য দেশের সম্মতি থাকা জরুরি বাংলাদেশ যে স্লট টির জন্য আবেদন করেছিল ২০০৫ সাল থেকে সেই স্লট টি নিয়ে রাশিয়া, জাপান, ভারত, তাজিকিস্তান চীনসহ আরো ২০টি দেশ তাদের আবেদন জমা দিয়ে রেখেছিল। বাংলাদেশ সরকার জানতো যে এই স্লট টি তাদের পক্ষে পাওয়া আপাতত সম্ভব নয় কিন্তু তারপর স্যাটেলাইট স্লট হিসাবে ১০২ ডিগ্রী অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উচ্চ কাভারেজ এর জন্য ভাল হওয়ায় এবং তা বাংলাদেশ থেকে মোটামোটি খাড়াখাড়ি ভাবে অবস্থিত হওয়া এতে বাংলাদেশ অধিকার এবং প্রয়োজন দুইটি ছিল। বাংলাদেশ আসলে জেনে শুনেই এতে আবেদন করে কারন (ITU) International Telecommunication Union এর নিয়ম অনুসারে কোন স্লটে যদি প্রাপ দেশ ছাড়াও একাধিক দেশ আবেদন করে থাকে তবে সেখানে অই দেশ গুলোকে নিয়ে গনশুনানির মাধ্যমে ঠিক করা হয় আসলে কোন দেশের এই স্লট প্রাপ্য যদি কোন কারনে সেটি অমিমাংশিত থাকে তবে অই স্লট থেকে সবচেয়ে কাছে অবস্থানকারী দেশ গুলোর মাঝে ভোটাভোটির মাধ্যমে ঠিক করা হবে সেই স্লট কাকে দেয়া হবে। যেহেতু বাংলাদেশ সরকার সব জেনে শুনেই এতে আবেদন করে তাই বুঝাই যাচ্ছে এর পেছনে কোন বিশেষ ভবিষ্যৎ পরিকলনা সরকার এর আছে। আর এই স্লট টি নিয়ে এখনো শুনানি চলমান রয়েছে। এই স্লট টি ভবিষ্যৎ এ কে পাবে তা ভবিষ্যৎ বলতে পারে।


তো উক্ত ঘটনার কয়েক মাসে মাথায় বাংলাদেশ (ITU) সদস্য সচিব হিসাবে নির্বাচিত হয় এবং বাংলাদেশ নতুন করে ৬৯ এবং ১০৫ ডিগ্রী  পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নিজেদের মালিকানা দাবী করেছে এবং ১০৫ তে ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান সহ পাঁচটি দেশের আপত্তি জানায় এবং অন্য একটি স্লট নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন আপত্তি আসে নি তাই সেটি একরকম নিশ্চিত আমারাই পাবো। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশ স্যাটেলাইট তৈরীর কাজ ফ্রান্স কে আগেই দিয়ে দেয় এবং নির্ধারিত সময়ে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন নিশ্চিত হয়ে যায় তখন অনেকটা বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ অন্যদেশ থেকে স্লট কেনার টেন্ডার দেয় যার মধ্যে আমেরিকা, জাপান এবং রাশিয়া অংশ নেয় তবে রাশিয়া বাদে বাকি দুই দেশ কিছু শর্ত জুরে দিয়েছিল যেমন তার সম্পূর্ন মালিকানা বাংলাদেশ কে ছাড়বে না উক্ত স্লটে একধিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের ক্ষেত্রে তাদের অনুমতি নিতে হবে এবং তাদের দেশে একটি গ্রাউন্ড স্টেশন বসাতে হবে। কিন্তু একমাত্র রাশিয়া সম্পূর্ন মালিকানা ১৫+৩০ মোট ৪৫ বছরের জন্য ছাড়তে রাজি হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকার চাইলে এই স্লট টি ১৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৪৫ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবে এবং একই স্লটে ৩ টি স্যাটেলাইট স্থাপন করতে হবে সেক্ষেত্রে আলাদা ভাবে কোন অনুমতি বা তাদের দেশে গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনের দরকার নেই। তাই সব দিক বিবেচনায় এটি আমাদের জন্য বেশি লাভজনক ছিল।

এর পর কয়েকদফায় সময় পেছায় থালাস কম্পানি। তাদের লঞ্চের দায়িত্ব থাকলেও তাদের রকেট একসাথে দুইটি ভারি স্যাটেলাইট পরিবহনে সক্ষম হওয়ায় এবং বিবি-১ ছাড়া অন্য কোন স্যাটেলাইট এর উৎক্ষেপনে প্রস্তুত না থাকায় তারা সময় পেছায় এবং পরে সরকার লঞ্চের দায়িত্ব আমেরিকান স্পেস-এক্স কে বুঝিয়ে দেয় এবং সর্বোশেষ মে১১ তারিখ(বাংলাদেশ সময়ে) আমাদের সপ্নের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করা হয়।

স্যাটেলাইট এর ব্যবহার এবং প্রযুক্তিগত দিক

আমাদের স্যাটেলাইট টি একটি জিওষ্টেশনারী কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট এই ধরনের স্যাটেলাইট কক্ষপথে নিজ স্লটে স্থির থেকে এবং এগুলো ৩০০০০-৩৬০০০ হাজার কিমি উচ্চতায় অবস্থান করে থাকে। এই অবস্থানে এটি একটি নিদিষ্ট এলাকা কাভার করে থাকে নিচে ছবিতে আমাদের বিবি-১ এর কাভারেজ এরিয়া দেখতে পারবেন।


আমাদের বিবি-১ স্যাটেলাইট টি তে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে যার মধ্যে ২৬ টি Ku Band (NATO equivalent J band) এবং ১৪ টি C band ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এই দুই band এই মুলত যোগাযোগ রক্ষায় ব্যবহার হয়ে থাকে যার মাঝে Ku band 12GHz - 18GHz এর মাঝে ফ্রিকোয়েন্সি আদান প্রদান করে এবং; C band 4GHz- 8GHz ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে।

C Band প্রথমে C-Band নিয়ে কথা বলি এগুলো নরমাল কমিউনিকেশন ফ্রিকোয়েন্সি যারা স্যাটেলাইট ভিত্তিক টেলিকমিউনিকেশন সেবা দিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে.।  এই ধরনের ফ্রিকোয়েন্সির গতি আলোর গতি সমান হয়। এই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে স্যাটেলাইট ফোন, ওয়াইফাই সেবা বাড়ানো, প্রতন্ত অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ এর আওতায় আনা যাবে। বলতে গেলে এটি একটি বেসামরিক তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এর প্রতন্ত অঞ্চল গুলোতে তথ্য প্রযুক্তির আওতায় আনা যাবে। এই ফ্রিকোয়েন্সি গুলো শর্ট হয় তবে শক্তিশালী হয় তাই দূর্যোগকালীন অবস্থায় এই ফ্রিকোয়েন্সি সমান কাজ করতে সক্ষম আইলা বা সিডর এর মত প্রাকৃতিক দূর্যোগ এ এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত কার্যকারী হবে যা ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে আরো সহায়ক হবে।(Defres) এছাড়া আমাদের ইন্টারনেট সেবার বাইরে থাকা ৭০০ ইউনিয়ন এবং পার্বত্য অঞ্চলে  টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার হবে।

Ku Band এবার আসি Ku band নিয়ে। Ku band একটি মিডিয়াম টু হাই ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ ব্যবহার করে থাকে। এটি ন্যাটো স্টান্ডার J band এর সমকক্ষ যা মুলতো UHF( Ultra high Frequency), VHF( Very High Frequency) যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।  এই ধরনের ব্যান্ড ব্যবহার করেই মুলত স্যাটেলাইট; এর মাধ্যমে টিভি চ্যানেল এর তরঙ্গ আদান প্রদান, রেডিও কমিউনিকেশন, উচ্চ গতির ইন্টারনেট ভিত্তিক সেবা প্রদান, টেলিকমিউনিকেশন, টেলিমেডিসিন, স্যাটেলাইট ফোন ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, সারভেল্যান্স, দূর্যোগকালীন জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন এবং সর্বোশেষ মিলিটারি কমিউনিকেশন এন্ড সার্ভেল্যান্সে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। D2H, HD Video broadcast সেবাও এই ব্যান্ডের আওতা ভুক্ত। আমরা যেসব টিভি চ্যানেল বর্তমানে দেখে থাকি তা সব গুলোই এই Ku band এর মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌছায়। তবে আমারা অন্য দেশের স্যাটেলাইট ব্যবহার করায় এখনো HD D2H কানেকশন পেতে সক্ষম হই নি। বাকি বিষয় গুলো আমরা সবাই মোটামোটি জানলেও Ku band মিলিটারি এর কি কাজে লাগবে তা কেউ জানি না। আর আমার মনে হয় আমাদের এই স্যাটেলাইট এর মিলিটারি ব্যবহার সম্পর্কে জানার পর যারা কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গেল বলে হাই হুতাস করছেন ভারতের সার্ক স্যাটেলাইট প্রেরনের পর থেকে রাগে অদের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করেছেন তাদের মনে একটু হলেও শান্তি ফিরে আসবে


বিবি_১এর কৌশলগত ব্যবহার:

বিবি-১ স্যাটেলাইট টির Ku band এর টান্সপন্ডার মিলিটারি বা আমাদের আমর্ড ফোর্সে ব্যবহার করা হবে। এটি যে আমাদের জন্য কৌশলগত কতটা গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই জানি না। গত ৩ বছর ধরে আমরা ১৬ ডিসেম্বর এর মিলিটারি প্যারেড়ে ইস্ট বেংগল রেজিমেন্ট এর নতুন কমিউনিকেশন ডিভাইন এর সজ্জা দেখে যে খুশি তে আনন্দে দাত বের করে ভারত মিয়ানমার কে ট্রল করে আসছি তারা হয়তো জানেন না যে ইস্ট বেংগল বা আমাদের সেনাবাহিনীর এই নতুন সজ্জায় ব্যবহৃত পারসোনাল VHF কমিউনিকেশন ডিভাইসস গুলো স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে আমাদের সৈনিক দের মাঝে যোগাযোগ রক্ষা করার কাজে ব্যবহার হবে।আর এই স্যাটেলাইট ফ্রিকোয়েন্সির দরুন নিচের চিত্রের স্যাটেলাইট কাভারেজ এরিয়ার যেকোন স্থানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন নিজেদের মাঝে যোগাযোগ স্থাপন করে অপারেশন চালাতে সক্ষম। বর্তমান এই ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা দক্ষিন এশিয়ায় শুধু ভারতের ছিল এবং পাকিস্তান চীনের সহায়তায় এই সেবা ব্যবহার করে আসছে তাদের নিজস্ব দুইটি স্যাটেলাইট মহাকাশে থাকলেও সেগুলো এই ধরনের সেবার জন্য নয় তবে তারা এই বছরেই তাদের নতুন একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করতে যাচ্ছে যার দরুন তাদের আর্মড ফোর্স নিজ্বস ভাবে এই সেবা ভোগ করতে পারবে। ফলে তাদের চীনের উপর নির্ভর করতে হবে না এবং নিজেদের মিশনের গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারবে এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে। আর আপনি নিশ্চিয় চাইবেন না আপনার অপারেশনের খবরাখবর অন্য কেউ আড়িপেতে শুনুক। আপনার গোপন তথ্য কেউ ট্রাপ করুক। নিজ্বস স্যাটেলাইট আর থাকায় আমাদের সুরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন মাত্র যোগ হল। শুধু সেনাবাহিনী নয় এই সেবা ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের নেভি গভীর সমুদ্রে অপারেশনাল ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। নিজ্বস কমিউনিকেশন থাকায় তার গোপনীয়তা যেমন থাকবে তেমনি সেই ফ্রিকোয়েন্সি ক্রমাগত পরিবর্তন করে আমারা শত্রু কে ফাকি দিতে পারবো সেটা যেখানেই থাকি না কেন এর মাধ্যমে আমাদের গ্রীন ওয়াটার নেভি হবার সপ্ন আরো অগ্রসর হলো যার ফলে এখন সীপ টু গ্রাউন্ড বেস কমিউনিকেশন এ আর কোন বাধা থাকলো না । আমাদের গ্রুপের বিভিন্ন পোস্টে সবাই জেনেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তাদের সিমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন সার্ভ্যলন্স প্রযুক্তি ব্যবহার করতে যাচ্ছে। এই নিয়ে আমাদের গ্রুপের সম্মানিত এডমিন তানভীর ভাই কয়েকদফা তথ্য নির্ভর পোস্ট দিয়েছেন। কিন্তু কারো মনে কি এই প্রশ্নটি এসেছে এই অত্যাধুনিক বর্ডার সার্ভ্যলেন্স ব্যবস্থায় স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে সার্বক্ষনিক তথ্য আদান প্রদান এর  দায়িত্ব টি কে পালন করবে।। যদি প্রশ্নটি আসতো তাহলে হয়তো স্যাটেলাইট দিয়ে কয় টাকা ইনকাম হবে সেই ধান্দা নিয়ে পরে থাকতেন না আর সরকার কে কারো দালাল হিসাবে উপাধি দিতেন না। (মাঝে মাঝে এখন ভয় লাগে আমিও না এই সব তথ্য দিয়ে দালাল ট্যাগ খাই)।

সামরিক বাহিনী মোট কয়টি Ku band ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করবে তা উল্লেখ করা হয়নি তবে অনেক বলছে তারা ২ টি ট্রান্সপন্ডার চেয়েছে নিজস্ব ব্যবহারের জন্য যার নিয়ন্ত্রন (SPARRSO) এর অধিনে থাকবে। আরো কিছু বিষয় আছে কিন্তু পোস্টের সাইজের জন্য আর যুক্ত করতে চাই না। এটুকি যথেষ্ট মনে হয়।


কিছু ভুল ধারনার সমাধান :

প্রথমেই যে তথ্য টি নিয়ে বেশি বিভ্রান্তি আসছে তা হলো আমাদের দেশের চ্যানেল গুলো স্যাটেলাইট ব্যবহার করবে না কারন ১১৯' তে ভাল ছবি পাওয়া যাবে না। অই সব বিশেষ অজ্ঞের জন্য এক বালতি সমবেদনা। বিবি-১ একটি জিওষ্টেশনারী স্যাটেলাইট যা একটিভ ফ্রিকোয়েন্সি আদান প্রদান করবে কোন ছবি নয়। বেসরকারি টিভি চ্যানেল গুলো যে সমস্যার কথা জানিয়েছে সেটি হলো স্যাটেলাইট এর কাভারেজ নিয়ে। ছবি তে স্যাটেলাইট টির কাভারেজ এরিয়া দেখলে খেয়াল করবে এটি মিডেল ইস্টের দেশ গুলোতে কাভার করতে সক্ষম নয়। অথচ মিডেল ইস্টের দেশ গুলো তে বাংলাদেশ এর সবচেয়ে বেশি প্রবাসী থাকায় সেই দেশ গুলো তে আমাদের বাংলা চ্যানেল গুলোরর চাহিদা বেশি। কিন্তু কাভার যদি না হয় সেক্ষেত্রে কিভাবে তারা সেখানে তাদের চ্যানেল কে পৌছে দেবে  আর এই কারনে তারা তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। আপনারা সবাই জানেন আমাদের দেশের অধিকাংশ চ্যানেল Apstar-7 নামের একটি সিংগাপুর/আমেরিকা ভিত্তিক স্যাটেলাইট কে ভাড়া করে ব্রডকাস্ট করে আসছে। এছাড়া আরো ২ টি স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। এই স্যাটেলাইট গুলো মধ্যপ্রাচ্য কাভারেজ করতে সক্ষম একটি বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে যার নাম Satellite constellation সার্ভিস। আপনারা অনেকেই জানেন আমাদের অনেক টিভি চ্যানেল যেমন ৭১ টিভি, সময় টিভি ইত্যাদি চ্যানেল গুলো আমেরিকা , কানাডা এই দেশ গুলো তেও দেখা যাবে কিন্তু এরা Apstar-7 নামের একটি স্যাটেলাইট থেকে সিগনাল আদান প্রদান করে তবে কিভাবে একটি স্যাটেলাইট বিপরীত গোলার্ধে থাকা অন্য একটি দেশ কে সিগনাল পাঠায়।  তার উত্তর হল এই Satellite constellation। আসলে Apstar-7 কোন একক স্যাটেলাইট নয় বরং এটি ৭ টি স্যাটেলাইট এর সমন্বয়ে গঠিন একটি স্যাটেলাইট যারা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে নিজেদের মধ্যে ফ্রিকোয়েন্সি আদান প্রদান করে এবং বিশাল অঞ্চলে কাভারেজ দিতে সক্ষম হয়। যা একক ভাবে একটি স্যাটেলাইট পারে না। তো আমাদের বিবি-১ স্যাটেলাইট টিও একই প্রযুক্তি গ্রহন করবে। সেক্ষেত্রে বিটিয়ারসি মহাকাশে থাকা অন্যান্য জিওষ্টেশনারী স্যাটেলাইট এর সাথে তরঙ্গ বিনিময় করে যেখানে নিজেদের কাভারেজ নেই সেখানেও ব্রডকাস্ট চালু রাখতে পারবে। সেক্ষেত্রে অই সব অঞ্চল কাভার করে এমন স্যাটেলাইট গুলোর সাথে চুক্তিতে যেতে হবে। আর সেই বেপারে কাজ শুরু হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে অই সব স্যাটেলাইট কে নিজেদের ফ্রিকোয়ােন্সি দিয়ে তাদের ফ্রিকোয়য়েন্সি আমরা ব্যবহার করতে পারবো। আর যেহেতু আমাদের স্যাটেলাইট এর ফ্রিকোয়েন্সি খরচ আন্তর্জাতিক খরচ থেকে কম তাই দেশিয় চ্যানেল গুলো অবশ্যই এই তরঙ্গ ব্যবহার করবে। শুধু দেশীয় চ্যানেল নয় আমাদের ইন্টারনেট সেবা দান কারী সংস্থা সমুহ নিজ্বস স্যাটেলাইট ব্যবহার করবে তা এক রকম নিশ্চিত। আমাদের সরকার ২০ টি ট্রান্সপন্ডার রেখে বাকি গুলো বেসরকারি হাতে ছেড়ে দিবে।। আপনাদের অনেকি অনেক হিসাবে দিয়েছেন নেপাল, মিয়ানমার কেন ভারত চীন রেখে আমাদের স্যাটেলাইট ব্যবহার করবে। আমি বলবো তাদের ব্যবহার করার কি দরকার দক্ষিন এশিয়ার বাইরে আরো অনেক দেশ আছে যাদের নিজ্বস স্যাটেলাইট নেই তারা ভাড়া নিয়ে চলছে তাদের কাছে আমাদের বাজার একেবারে কম নয়। এত নেগেটিভ এর মাঝে কেউ এই খবর টি পায় নি ফিলিপাইন আমাদের স্যাটেলাইট থেকে ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নেবার আগ্রহ দেখিয়েছে। এমন কি বাংলাদেশ সরকার ইন্দোনেশিয়া লাওস, কম্বোডীয়ার মত আরো কিছু দেশ কে অফার করেছে। প্রাইভেট মালিকানাধীন স্যাটেলাইট অপেক্ষা খরচ কম হওয়ায় অনেকি আমাদের স্যাটেলাইট থেকে ট্রন্সপন্ডার ভাড়া নিবে এরকম আশা করা যায়। কিন্তু আমরা বাঙালি রা নেগেটিভ ভাবতে বেশি ভালবাসি। অনেক দেশ আছে যাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকার পরেও বাইরের স্যাটেলাইট ভাড়া নেয় স্যাটেলাইট এর পজিশন সুবিধার কারনে আর আমাদের স্যাটেলাইট এর পজিশন সুবিধার কারনে আমরাও সেই সুবিধা ভোগ করতে পারি।

 এত কিছুর পরেও যদি আমাদের স্যাটেলাইট থেকে ১০০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয় তাহলে আমি বলবো ৩ নং খন্ড টি আবার পড়েন।


কয়েকটি সাইটে উল্লেখ করা হয়েছে এই স্যাটেলাইট নাকি ফ্রান্স আর আমেরিকা চালাবে। কিন্তু তথ্যটি আসলে বিকৃত করা হয়েছে আর কিছুই নয়।  আমাদের স্যাটেলাইট টি প্রথম ৩০ দিন বা এক মাসের জন্য পর্যবেক্ষনে থাকবে আর তার দায়িত্ব থাকবে যুক্তরাষ্ট্র এর স্পেস-এক্স, ফ্রান্সের থালাস এবং সাউথ কোরিয়া যারা শুধু মাত্র ১ মাসের জন্য এর পারফর্ম পর্যবেক্ষন করবে। এর পর পরবর্তী ৩ বছর ফ্রান্সের থালাস কম্পানির প্রতিনিধিদল বাংলাদেশর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে এটি নিয়ন্ত্রন করবে আর ফ্রান্স থেকে এটি পর্যবেক্ষন করবে। তাই পর্যবেক্ষন আর নিয়ন্ত্রন দুইটি বিষয় সম্পূর্ন আলাদা। ৩ বছর পর বাংলাদেশ এর দায়িত্ব বুঝে নিবে। মানে এর পর ফ্রান্স এই স্যাটেলাইট এর কোন দায় বহন করবে না তবে এর মাঝে যদি স্যাটেলাইট টি কোন ভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয় তবে তার সম্পূর্ন দায় ভার থালাস এর থাকবে। তবে যেহেতু এর মেয়াদ ১৫ বছর তাই এই ১৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ সরকার এর একটি বীমা করা আছেন যার দরুন এই ১৫ বছরে এই স্যাটেলাইট টি কোন ভাবে বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশ তার ক্ষতিপূরণ পাবে।
বাংলাদেশ ১১৯ পূর্ব দ্রাঘিমা তে স্লট টি পেয়েছে সেটি ২ দফায় ৪৫ বছর পর্যন্ত মালিকানা রাখতে পারবে আর এই স্লটে আরো দুইটি স্যাটেলাইট পাঠাতে পারবে। বাংলাদেশ খুব শ্রীগ্রই এই স্লটে আরো একটি নিজ্বস মেটরলজি স্যাটেলাইট পাঠানোরর চিন্তা করছে। এছাড়া বাংলাদেশ ৬৯ আর ১০৫ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের জন্য আবেদন জানিয়েছে। আর এ থেকে বুঝা যায় বাংলাদেশ আগামী কয়েক দশকে আরো কয়েকটি স্যাটেলাইট পাঠাবে। যা অধিকাংশ সামরিক এবং যোগাযোগ এর জন্য পাঠানো হবে। তাই যত স্যাটেলাইট পাঠানো হবে তত বাংলাদেশ এর আর্থিক ক্ষতি বাড়বে। হয়তো আগামী কয়েক দশকে প্রতিবার স্যাটেলাইট পাঠানোর পর তার আর্থিক ক্ষতি নিয়ে কিছু সংখ্যক মানুষ একই ভাবে চিন্তা জ্ঞানহীন ভাবে নিজেদের নেগেটিভ মন্তব্য ফেসবুক, টুইটার ইউটিউব এ ছড়াতে থাকবে কিন্তু তাতে আমাদের অগ্রগতি থামবে না।




#SD

Post a Comment

 
Top