GuidePedia

0

সাপ নিয়ে কিছু ভুল ধারণা ও কুসংস্কার
১।সাপের মণি এই ধারণা সম্পূর্ণই ভুয়া।সারা বিশ্বের শত শত প্রজাতির সাপের মধ্যেও কোন প্রজাতির সাপের মাথায় এমন কিছুই নেই।সাপুড়েরা  সাধারণ মানুষদের আকর্ষণ করার জন্য এই ধরনের কথা বলতো আর এখনো বলে আর মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বাস করে আসছে।সাপের মণি সম্পর্কে জিজ্ঞাস করায় অনেক আগে আমার পরিচিত একজন তার একটি অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন,তিনি এক সাপুড়েকে রাস্তায় খেলা দেখাতে দেখেন।একসময় সাপুড়ে তার ঝুড়ি থেকে একটি সাপ বের করে যার মাথায় একটি চকচকে পাথর ছিল।স্থানটি একটি প্রত্যন্ত গ্রামে হওয়ায় যারা সেখানে সাপের খেলা দেখছিলেন তারা সবাই ছিল গ্রামের সাধারণ মানুষ।তারা সাপের মাথার সেই পাথর দেখে সত্যি মনে করে।কিন্তু আমার সেই বড় ভাই বুঝতে পারে সেই মণি আসলে একটি ছোট পাথর যা সাপুড়ে আঠা দিয়ে আগেই সাপের মাথায় লাগিয়েছে রেখেছে।এরপর সাপুড়ে সেই পাথরটি খুব যত্নে খুলে সবাইকে দেখায় ও বলে এই সাপ সে পাহাড় থেকে ২০ দিন খোঁজার পর পেয়েছে আর এই সাপের সঙ্গী নাকি তাকে হত্যা করতে তার পিছু পিছু আসছে।এই সাপের মণি নাকি মানুষের সৌভাগ্য নিয়ে আসতে পারে এসব বলে সে তার পাথরের মার্কেটিং করতে থাকে।সবাই তার কথা বিশ্বাসও করে ফেলে।প্রাচীনকাল থেকেই সাপুড়ে ও অন্য ভাগ্যগণক নামের ভণ্ডরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে আসছে। 

২।দাঁড়াশ সাপ বিষাক্ত- 

দাঁড়াশ সাপ নির্বিষ সাপ তা অনেকেই জানে না।অনেকে ভাবে
দাঁড়াশ সাপের লেজে বিষ রয়েছে।এই বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভ্রান্ত।দাঁড়াশ সাপের
লেজে কোন বিষ নেই।তাদের বিষদাঁত ও নেই।এই সাপ গ্রাম অঞ্চলে অনেক দেখা যায়।অনেকেই দেখা মাত্র মারতে উদ্যত হয় দাঁড়াশকে বিষধর সাপ ভেবে।কিন্তু নির্বিষ ও নিরীহ এই সাপ ইঁদুর খেয়ে কৃষকদের ফসল রক্ষায় অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।আমাদের দেশের অধিকাংশ সাপই নির্বিষ।
৩।বীণ বা বাঁশির সুরে সাপ আসে- 

বীণ বা বাঁশির সুরে সাপ আসে এই বিশ্বাস বা ধারণা খুবই হাস্যকর।কারণ সাপদের কানই নেই! এদের দৃষ্টি শক্তিও প্রখর নয়। এরা আবছা দেখতে পায়। সাপুড়েরা বীণ বাজান, তাঁরা সেটি সাপের মুখে সামনে দোলাতে থাকেন। সাপও চোখের সামনে দুলুনি দেখে মাথা দোলাতে থাকে এই ভেবে যে, কোনও শত্রু এল।সাপ বাশিরে শব্দে নাচে না সে বীণ দেখে আক্রমণ করার জন্য তৈরি হয়ে থাকে।
৪। সাপ দুধ খায়-

এই ধারণা পুরোই ভুয়া।সাপ শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী।সাপের পক্ষে দুধ হজম করা কষ্টকর।এমনি তার মৃত্যুও হতে পারে দুধ পানে।তারা কখনোই দুধ পান করে না। সাপুড়েরা অনেক দিন এমনকি মাস পর্যন্ত সাপদের পানি না খাইয়ে রাখে।পানির অভাবে তৃষ্ণার্ত সাপের সামনে তারা যখন দুধ দেয় তখন বাধ্য হয়ে তারা সেই দুধ দিয়েই তৃষ্ণা নিবারণ করে।প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ভাবে তারা কখনোই দুধ পান করতে যাবে না।
৫। সাপ মানুষকে তাড়া করে 

সাপ মানুষের শত্রু নয় বরং মানুষই সাপের শত্রু বলা যায়।সাপ কখনো মানুষকে যেচে কামড়াতে আসে না।সাপ দেখলে বা সাপের সামনে পড়ে গেলে লাফালাফি বা দৌড়াদৌড়ি করলেই সাপ ভয় পেয়ে যায় ও আত্মরক্ষার জন্য কামড় দেয়।মাথা ঠাণ্ডা রাখলে ও সাপকে চুপচাপ এড়িয়ে চলে গেলে সাপও আপনাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে।

৫। সাপ শত্রুকে চিনে রাখে-

সাপকে আঘাত করলে বা কোন সাপকে মারলে সেই সাপ বা সেই সাপের সঙ্গী আঘাতকারীকে চিনে রাখে ও পরে তাকে খুঁজে হত্যা করে এমন ঘটনা সত্যিই সম্ভব! হ্যাঁ সম্ভব তবে সেটা আমাদের দেশের বা ভারতের কোন নিম্নমানের মুভিতেই বা হিন্দি সিরিয়ালেই সম্ভব। বাস্তবে সাপ মানুষ দেখলেই পালাতে চায় আর সাপের তেমন কোন স্মৃতি শক্তিও নেই যে সে কাও কে মনে রাখবে। তাদের দৃষ্টি শক্তিও বেশি ভালো না। আর সাপ জোড়া বেঁধে জীবন যাপন করে না। শুধু প্রজননকালেই এরা জোড়া বাঁধে ও কিছু দিন একসাথে থাকে। তার পর আবার আমার মতো সিঙ্গেল জীবনযাপন শুরু করে।
৬।সাপের নাচ-

গ্রামে ও গাছপালা পূর্ণ এলাকায় অনেক সময় দুইটি সাপকে শারীরিক কসরত করতে দেখা যায়। অনেকে ভাবে এটি সাপের নৃত্য। আসলে এই দৃশ্য দুটি পুরুষ সাপের লড়াইয়ের অথবা সাপদের যৌনমিলনের।
৭।সাপ বিষ ছুড়ে মারে-
এমন সাপ আমাদের দেশে তো নেইই। ভারতীয় উপমহাদেশেও নেই। তবে পৃথিবীতে এমন প্রজাতির সাপ আছে। তাদের স্পিটিং কোবরা বলে। কিন্তু তাদের আফ্রিকা এবং এশিয়ার কিছু অংশে দেখতে পাওয়া যায়।
৮। শয়তান বা মানুষের ক্ষতিকর অতিপ্রাকৃতিক কোন শক্তি সাপের রূপ নিয়ে আসে-
এই ধারণাও ভুল।আপনার দেখা সাপটি যে শয়তান বা অতিপ্রাকৃতিক কোন কিছু তা বুঝার কোন উপায় নেই।আপনার ধারণার উপরে কোন নিরীহ সাপকে হত্যার অধিকার নিশ্চয়ই আপনার নেই।সাপ যদি শয়তান বা মানুষের শত্রুই হয়ে থাকতো তবে সৃষ্টিকর্তা তাদের সৃষ্টি করতো না।প্রাচীনকালে সাপের কামড়ের চিকিৎসা ছিল না।আর সকল প্রকার বন্যপ্রাণীর সংখ্যাই ছিল অনেক।তাই মানুষের জীবন রক্ষার্থে সাপ দেখলে হত্যা করা হতো।কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই।এখন সাপের কামড়ের চিকিৎসা আছে ও সাপের বিষ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জীবন রক্ষাকারী ঔষুধও তৈরি হচ্ছে।বনাঞ্চল ও ঝোপঝাড় কমে যাওয়ায় ও প্রচুর পরিমাণে হত্যা করায় সাপদের সংখ্যাপ্রচুর কমে যাচ্ছে।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ না বুঝে নির্বিষ সাপদের মেরে ফেলে। সাপ দেখলেই মারার একটি প্রবণতা আমাদের দেশের মানুষদের মনে হাজার বছর ধরে রয়েছে।আমাদের এই সাপ হত্যার মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সাপ ইঁদুর খেয়ে আমাদের অনেক উপকার করে।ফসলের রক্ষায় সাপের ভূমিকা অনেক বেশি।সাপ না থাকলে ইঁদুরের সংখ্যা মারাত্মক ভাবে বৃদ্ধি পাবে।যার প্রভাব পরবে ফসলের উপর।এছাড়া সাপ অনেক ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ খেয়ে পরিবেশে ভারসাম্য বজায় রাখে।সাপ বিভিন্ন শিকারি পাখি,বনবিড়াল,চিতা বিড়াল,খাটাস,বেজি,গুইসাপ এদের খাদ্য।সাপ কমে গেলে এদের খাবারের ওপর প্রভাব পরবে।আসুন সাপের সম্পর্কে সব ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কারগুলো আমরা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে সাপ রক্ষায় এগিয়ে আসি।সাপদের রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টি করি।বিশেষ করে ঢাকা ও অন্যান্য শহরের বাইরে যারা বাস করেন তারা প্রায়ই সাপের দেখা পান বা আপনাদের আসেপাশেই সাপ হত্যা বেশি হয়।আপানারা সাপ রক্ষায় ও সাপদের যেন না মারা হয় সেই ব্যাপারে পরিবার ও পরিচিত সবাইকে বুঝান।পরিবেশে সাপের উপকারিতা বুঝান ও সাপদের নিয়ে থাকা ভ্রান্ত বিশ্বাসগুলো দূর করান।সবার প্রচেষ্টাই পারে নিরীহ সাপদের রক্ষা করতে।

সংগ্রহিত ।

Post a Comment

 
Top