সকল মহাকাশ প্রেমিক মানুষের ভালোবাসার আরেকনাম হলো হাবল স্পেস টেলিস্কোপ! এটি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় টেলিস্কোপ। বিশাল এই টেলিস্কোপটি নির্মাণ শেষ হলে ১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল শাটল মিশন STS-31 দ্বারা স্পেস শাটল ডিসকভারি দিয়ে এটিকে পাঠানো হয় পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাইরে । পৃথিবী থেকে ৫৯৬ কিলোমিটার উঁচুতে এর কক্ষপথে স্থান হয় টেলিস্কোপটির।
হাবল টেলিস্কোপ নিয়ন্ত্রণ করা হয় পৃথিবী থেকে। এটি একটি প্রতিফলন টেলিস্কোপ, আয়নার প্রতিফলনে সে দূরবর্তি বস্তুর তথ্য ধারণ করতে সক্ষম। সঠিক করে বললে হাবল মূলত ক্যাসেগ্রেইন রিফ্লেক্টর ঘরানার টেলিস্কোপ। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের জুলাইতে এতে জোড়া হয় চন্দ্র এক্স-রে টেলিস্কোপ। চন্দ্র’র ক্ষমতা এতটাই ব্যাপক যে, দেড় মাইল দূর থেকে ওটা দিয়ে দেড় ইঞ্চির কোনো লেখা অনায়াসে পড়া সম্ভব। প্রতি ৯৭ মিনিটে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ঘন্টায় ২৮,২০০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসে। এর যাবতীয় শক্তি’র প্রয়োজন সে মেটায় সূর্যের আলো থেকে, এবং এজন্য এর রয়েছে ২৫ ফুট লম্বা দুটো সৌরপ্যানেল। আর শক্তি সঞ্চয়ের জন্য রয়েছে ৬টি নিকেল-হাইড্রোজেন ব্যাটারি, যেগুলো একত্রে ২০টা গাড়ির বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করতে পারে।
হাবল টেলিস্কোপ অতিবেগুনী থেকে অবলোহিত পর্যন্ত (১১৫-২৫০০ ন্যানোমিটারে) আলোর সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যে দেখতে সক্ষম। এই অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা নিয়ে হাবল যা পর্যবেক্ষণ করে তার প্রেক্ষিতে প্রতি সপ্তাহে ১২০ গিগাবাইট তথ্য পাঠায়। এতো এতো তথ্য সংরক্ষণে তাই ম্যাগনেটো-অপটিক্যাল ডিস্ক ব্যবহৃত হয়। হাবল, তার তোলা প্রথম ছবি পাঠায় ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ২০ মে, সেটা ছিল স্টার ক্লাস্টার NGC 3532’র একটা দৃশ্য। সেই থেকে লক্ষাধিক ছবি পাঠিয়েছে পৃথিবীতে। আর সেসব ছবি বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে মহাবিশ্বের বয়স, জানা গেছে কোয়াযারদের সম্বন্ধে আর ডার্ক এনার্জি বা কৃষ্ণশক্তি সম্বন্ধে। হাবলের চোখ দিয়ে বিজ্ঞানীরা একেকটা গ্যালাক্সির বিভিন্ন অবস্থা সম্বন্ধে জেনেছেন। হাবল আবিষ্কার করে মহা শক্তিশালী গামা রে বার্স্ট বা গামারশ্মির বিষ্ফোরণ। হাবল, মহাকাশে গ্যাসের কিছু কুন্ডলি এমনভাবে আবিষ্কার করেছে, যেনবা তারা কিছু একটার ফাঁদে আটকা পড়েছে, যা ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করে। হাবল, বৃহস্পতি’র উপগ্রহ ইউরোপার বাতাসে অক্সিজেনের উপস্থিতি সনাক্ত করেছে। এডউইন হাবল প্রমাণিত সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের মাত্রা আবিষ্কার করেছে হাবল টেলিস্কোপ। আর, হাবলের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে রচিত হয়েছে ৬,০০০-এরও বেশি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ।
হাবলে ব্যবহৃত হয়েছে ওয়াইড ফিল্ড ক্যামেরা ৩ (WFC3), যা অতিবেগুনী রশ্মির কাছাকাছি রশ্মি, দৃশ্যমান আলোকরশ্মি, আর ইনফ্রারেডের কাছাকাছি রশ্মি দেখতে পারে। এর কস্মিক অরিজিন স্পেকট্রোস্কোপ (COS) অতিবেগুনীরশ্মিতে দেখতে পারে। এটা অনেকটা প্রিজমের মতো আলোকে ভাগ করে, ফলে এর দ্বারা দৃশ্যমান বস্তুর তাপমাত্রা, রাসায়নিক মিশ্রণ, ঘনত্ব, আর গতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এর অ্যাডভান্সড ক্যামেরা ফর সারফেস (ACS) দৃশ্যমান আলো দেখতে পারে, আর এটা ব্যবহৃত হয় মহাবিশ্বের প্রথম দিককার দৃশ্যগুলো ধারণ করতে। এছাড়া ডার্কম্যাটার, মহাবিশ্বের দূ-রবর্তি বস্তু, গ্যালাক্সির চাকতি ইত্যাদি গবেষণায়ও ব্যবহৃত হয়। এর স্পেস টেলিস্কোপ ইমেজিং স্পেকট্রোস্কোপ (STIS) অতিবেগুনী, দৃশ্যমান আলোকরশ্মি আর ইনফ্রারেডের কাছাকাছি আলো দেখতে সক্ষম, এবং এই যন্ত্রটি কৃষ্ণগহ্বর অনুসন্ধানে বেশ সক্ষম। এর নিয়ার ইনফ্রারেড ক্যামেরা অ্যান্ড মাল্টি-অবজেক্ট স্পেকট্রোমিটার (NICMOS) হলো হাবলের তাপ পরিমাপক যন্ত্র, এর দ্বারা লুক্কায়িত বস্তুর অনুসন্ধান করা হয়, আর দূরবর্তি আকাশে দৃষ্টি দেয়া হয়। আর এর ফাইন গাইড্যান্স সেন্সর (FGS) একে গাইড স্টার বা ধ্রুব তারা চিহ্নিত করে হাবলকে সেদিকে স্থির দৃষ্টিতে তাক করে থাকতে সহায়তা করে। এর সহায়তায় আরো যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করা হয় তা হলো দুটো তারার মধ্যকার দূরত্ব আর তাদের আনুপাতিক গতি পরিমাপ।
এই টেলিস্কোপটি নাসা পাঠালেও পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো বিজ্ঞানী হাবলকে ব্যবহারের অনুমতি চাইতে পারেন। অভিজ্ঞদের একটা প্যানেল তখন সেখান থেকে যোগ্যতমটি বাছাই করে সেদিকে হাবলকে ঘুরিয়ে সেখানকার ছবি তুলে পাঠান সেই বিজ্ঞানীকে বা সেই বিজ্ঞান মহলকে। প্রতিবছর এরকম বহু আবেদন জমা পড়ে, তবে সেখান থেকে বছরে প্রায় ১,০০০ আবেদন যাচাই করে প্রায় ২০০ আবেদন মঞ্জুর করা হয়, আর সেই আবেদন অনুযায়ী কাজ করতে হাবলকে মোটামুটি ২০,০০০ একক পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
L
হাবলের দেখভাল আর ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে নাসা’র গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার, আর স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইন্সটিটিউট (STScl)।
তথ্যসূত্রঃ https://en.wikipedia.org/wiki/Hubble_Space_Telescope
#nebula
হাবল টেলিস্কোপ নিয়ন্ত্রণ করা হয় পৃথিবী থেকে। এটি একটি প্রতিফলন টেলিস্কোপ, আয়নার প্রতিফলনে সে দূরবর্তি বস্তুর তথ্য ধারণ করতে সক্ষম। সঠিক করে বললে হাবল মূলত ক্যাসেগ্রেইন রিফ্লেক্টর ঘরানার টেলিস্কোপ। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের জুলাইতে এতে জোড়া হয় চন্দ্র এক্স-রে টেলিস্কোপ। চন্দ্র’র ক্ষমতা এতটাই ব্যাপক যে, দেড় মাইল দূর থেকে ওটা দিয়ে দেড় ইঞ্চির কোনো লেখা অনায়াসে পড়া সম্ভব। প্রতি ৯৭ মিনিটে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ঘন্টায় ২৮,২০০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসে। এর যাবতীয় শক্তি’র প্রয়োজন সে মেটায় সূর্যের আলো থেকে, এবং এজন্য এর রয়েছে ২৫ ফুট লম্বা দুটো সৌরপ্যানেল। আর শক্তি সঞ্চয়ের জন্য রয়েছে ৬টি নিকেল-হাইড্রোজেন ব্যাটারি, যেগুলো একত্রে ২০টা গাড়ির বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করতে পারে।
হাবল টেলিস্কোপ অতিবেগুনী থেকে অবলোহিত পর্যন্ত (১১৫-২৫০০ ন্যানোমিটারে) আলোর সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যে দেখতে সক্ষম। এই অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা নিয়ে হাবল যা পর্যবেক্ষণ করে তার প্রেক্ষিতে প্রতি সপ্তাহে ১২০ গিগাবাইট তথ্য পাঠায়। এতো এতো তথ্য সংরক্ষণে তাই ম্যাগনেটো-অপটিক্যাল ডিস্ক ব্যবহৃত হয়। হাবল, তার তোলা প্রথম ছবি পাঠায় ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ২০ মে, সেটা ছিল স্টার ক্লাস্টার NGC 3532’র একটা দৃশ্য। সেই থেকে লক্ষাধিক ছবি পাঠিয়েছে পৃথিবীতে। আর সেসব ছবি বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে মহাবিশ্বের বয়স, জানা গেছে কোয়াযারদের সম্বন্ধে আর ডার্ক এনার্জি বা কৃষ্ণশক্তি সম্বন্ধে। হাবলের চোখ দিয়ে বিজ্ঞানীরা একেকটা গ্যালাক্সির বিভিন্ন অবস্থা সম্বন্ধে জেনেছেন। হাবল আবিষ্কার করে মহা শক্তিশালী গামা রে বার্স্ট বা গামারশ্মির বিষ্ফোরণ। হাবল, মহাকাশে গ্যাসের কিছু কুন্ডলি এমনভাবে আবিষ্কার করেছে, যেনবা তারা কিছু একটার ফাঁদে আটকা পড়েছে, যা ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করে। হাবল, বৃহস্পতি’র উপগ্রহ ইউরোপার বাতাসে অক্সিজেনের উপস্থিতি সনাক্ত করেছে। এডউইন হাবল প্রমাণিত সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের মাত্রা আবিষ্কার করেছে হাবল টেলিস্কোপ। আর, হাবলের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে রচিত হয়েছে ৬,০০০-এরও বেশি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ।
হাবলে ব্যবহৃত হয়েছে ওয়াইড ফিল্ড ক্যামেরা ৩ (WFC3), যা অতিবেগুনী রশ্মির কাছাকাছি রশ্মি, দৃশ্যমান আলোকরশ্মি, আর ইনফ্রারেডের কাছাকাছি রশ্মি দেখতে পারে। এর কস্মিক অরিজিন স্পেকট্রোস্কোপ (COS) অতিবেগুনীরশ্মিতে দেখতে পারে। এটা অনেকটা প্রিজমের মতো আলোকে ভাগ করে, ফলে এর দ্বারা দৃশ্যমান বস্তুর তাপমাত্রা, রাসায়নিক মিশ্রণ, ঘনত্ব, আর গতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এর অ্যাডভান্সড ক্যামেরা ফর সারফেস (ACS) দৃশ্যমান আলো দেখতে পারে, আর এটা ব্যবহৃত হয় মহাবিশ্বের প্রথম দিককার দৃশ্যগুলো ধারণ করতে। এছাড়া ডার্কম্যাটার, মহাবিশ্বের দূ-রবর্তি বস্তু, গ্যালাক্সির চাকতি ইত্যাদি গবেষণায়ও ব্যবহৃত হয়। এর স্পেস টেলিস্কোপ ইমেজিং স্পেকট্রোস্কোপ (STIS) অতিবেগুনী, দৃশ্যমান আলোকরশ্মি আর ইনফ্রারেডের কাছাকাছি আলো দেখতে সক্ষম, এবং এই যন্ত্রটি কৃষ্ণগহ্বর অনুসন্ধানে বেশ সক্ষম। এর নিয়ার ইনফ্রারেড ক্যামেরা অ্যান্ড মাল্টি-অবজেক্ট স্পেকট্রোমিটার (NICMOS) হলো হাবলের তাপ পরিমাপক যন্ত্র, এর দ্বারা লুক্কায়িত বস্তুর অনুসন্ধান করা হয়, আর দূরবর্তি আকাশে দৃষ্টি দেয়া হয়। আর এর ফাইন গাইড্যান্স সেন্সর (FGS) একে গাইড স্টার বা ধ্রুব তারা চিহ্নিত করে হাবলকে সেদিকে স্থির দৃষ্টিতে তাক করে থাকতে সহায়তা করে। এর সহায়তায় আরো যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করা হয় তা হলো দুটো তারার মধ্যকার দূরত্ব আর তাদের আনুপাতিক গতি পরিমাপ।
এই টেলিস্কোপটি নাসা পাঠালেও পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো বিজ্ঞানী হাবলকে ব্যবহারের অনুমতি চাইতে পারেন। অভিজ্ঞদের একটা প্যানেল তখন সেখান থেকে যোগ্যতমটি বাছাই করে সেদিকে হাবলকে ঘুরিয়ে সেখানকার ছবি তুলে পাঠান সেই বিজ্ঞানীকে বা সেই বিজ্ঞান মহলকে। প্রতিবছর এরকম বহু আবেদন জমা পড়ে, তবে সেখান থেকে বছরে প্রায় ১,০০০ আবেদন যাচাই করে প্রায় ২০০ আবেদন মঞ্জুর করা হয়, আর সেই আবেদন অনুযায়ী কাজ করতে হাবলকে মোটামুটি ২০,০০০ একক পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
L
হাবলের দেখভাল আর ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে নাসা’র গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার, আর স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইন্সটিটিউট (STScl)।
তথ্যসূত্রঃ https://en.wikipedia.org/wiki/Hubble_Space_Telescope
#nebula
Post a Comment