নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর থেকে কিভাবে বিদ্যুৎ তৈরি হয়?
ইউরেনিয়ামের প্ররমাণু ভেঙ্গে যে শক্তি নির্গত হয় এবং এই পরমানূ ভেঙ্গে শক্তি উৎপাদন এর যে পক্রিয়া সেটি নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ক্লিয়ার রিয়েক্টর।
ইউরেনিয়ামের পরমানূ ভেংগে যে শক্তি উৎপন্ন হয় সেটা দিয়ে পানিকে ফুটিয়ে বাস্প (স্টিম) করা হয় এবং এই স্টিম টারবাইন কে ঘুরায়। ফলে বিদ্যুৎ তৈরি হয়৷
বাস্প থেকে যে বিদ্যুৎ হয় সেই পক্রিয়া গ্যাস ভিত্তিক, কয়লা, এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে একই। অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস, কয়লা, এলএনজি, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল পুড়িয়ে পানি ফুটিয়ে স্টিম বা বাস্প করা হয়। আর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এই কাজটি করে ইউরেনিয়াম ভেঙ্গে সৃষ্ট প্রচুর তাপকে কাজে লাগিয়ে।
রিয়েক্টর মূলত শত শত ফুয়েল রড নিয়ে গঠিত যেখানে প্রতিটি ফুয়েল রডে হাজার হাজার ক্ষুদ্র সিরামিক ইউরেনিয়াম ফুয়েলের প্যালেট থাকে।
১০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করতে সক্ষম রিয়েক্টর কোরে প্রায় ৭৫ টন সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম থাকে।
রিয়েক্টর কোরে ইউরেনিয়াম -২৩৫ এর আইসোটোপ ফিশন পক্রিয়া হয় অর্থাৎ পরমানু গুলি ভাঙ্গতে থাকে। এর ফলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় এবং চেইন রিয়েকশন চলতে থাকে।
চেইন রিয়েকশন এর পক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত করার জন্য মডারেটর হিসাবে থাকে পানি অথবা গ্রাফাইট। এই মডারেটর হিসাবে পানি বা গ্রাফাইট ফিশন পক্রিয়ার উৎপন্ন নিউট্রনের পরিমানকে কমিয়ে দেয় যেন বেশি বেশি ফিশন পক্রিয়া হয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফিশন পক্রিয়ায় ইউরেনিয়েয়াম -২৩৫ এবং ২৩৮ থেকে প্লুটনিয়াম সৃষ্টি হয় যার অর্ধেকের বেশি আবার ভাঙ্গতে থাকে মানে ফিশন পক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যায়। এভাবেই এটি রিয়েক্টরের এক তৃতীয়াংশ শক্তি উৎপন্ন করে।
আমাদের রুপপুরে যদি ১২০০ মেগাওয়াট এর বিদ্যুৎ তৈরি হয় তবে রিয়েক্টরে ৩ গুন বেশি অর্থাৎ ৩৬০০ মেগাওয়াট সমান তাপ সৃষ্টি হবে।
এই ফিশন প্রক্রিয়ায় কিছু উপজাত সৃষ্টি হয় এবং এটি সিরামিক ফুয়েলের ভেতরেই থাকে এবং রেডিওএক্টিভ ডিকে সৃষ্টি হয় এবং তাপ নিঃসরন করে।
রিয়েক্টর কোর একটা স্টিল প্রেশার ভেসেলের ভেতর থাকে যার ফলে এর চারপাশে যে পানি থাকে সেটি যেন তরল অবস্থাতেই থাকে যদিও বা তাপমাত্রা ৩২০ ডিগ্রি হয়। মূলত প্রেশার ভেসেলের প্রচন্ড চাপ এটিকে বাস্পে পরিনত করেনা এবং তরল অবস্থায় থাকতে সাগায্য করে।
বাস্প তাহলে কোথায় সৃষ্টি হয়? বাস্প হয় রিয়েক্টরের উপরে অথবা এই রিয়েক্টর ভেসেলের পাশে আলাদা প্রেশার ভেসেল থাকে সেখানে যার দারা টারবাইন ঘুরে বিদ্যুৎ তৈরি হয়।
এই স্টিম পরে ঘনীভূত হয়ে পানিতে পরিনত হয় এবং আবার একি পক্রিয়ায় বাস্পে পরিনত হতে থাকে।
রিয়েক্টরের সব থেকে কমন ডিজাইন হল প্রচুর চাপ সৃষ্টি কারী প্রেশারাইজড ওয়াটার রিয়েক্টর৷ এর প্রাইমারি ঠান্ডা করার এবং তাপ পরিবহন করার সার্কিট থাকে। পাশে থাকে সেকেন্ডারি সার্কিট যেখানে বাস্প তৈরি হয়।
আরেক ধরনের রিয়েক্টরে পৃথক স্টিম তৈরির জন্য প্রেশার ভেসেল থাকে না। স্টিম সরাসরি রিয়েক্টরের উপরেই সৃষ্টি হতে থাকে। এই উভয় ক্ষেত্রেই পানিকে ঠান্ডা করার জন্য, অতিরিক্ত নিউট্রন চুষে নেবার জন্য এবং উৎপন্ন তাপ পরিবহন করে নিয়ে যাবার জন্য ব্যাবহার করা হয়।
একটা রিয়েক্টর এর কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে গেলে এক তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক ইউরেনিয়াম কয়েক বছর পর পর সরিয়ে নতুন করে ইউরেনিয়ামের সাপ্লাই দেয়া হয়।
এই প্রেশার ভেসেল এবং স্টিম জেনারেটর গুলিকে ১.২ মিটার পুরু কনক্রিটের কন্টেইনমেন্ট কক্ষে রাখা হয়।
এর মূল কারন হল রিয়েক্টরে বড় ধরনের সমস্যা হলে আশে পাশের মানুষ কে সুরক্ষা করা অথবা যেকোন বাহ্যিক আক্রমন হলে প্রতিহত করা। আমাদের রুপপুরেও কয়েক লেয়ারের কন্টেইনমেন্ট হিসাবে পুরু কংক্রিটের আবরন রয়েছে যাতে টুইন টাওয়ারের মত কোন বিমান আছড়ে পড়লেও ভেতরের রিয়েক্টরকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
রিয়েক্টর বন্ধ করে দিলেও তাপ উৎপন্ন সাথে সাথে বন্ধ হয়না। রেডিওএক্টিভ ডিকে থেকেও তাপ সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে কুলিং সিস্টেম চলতে থাকে যতক্ষণ না তাপ উৎপাদন কমে স্বাভাবিক হয়।
সারা বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ সাপ্লাই এর ১০% আসে পরমাণু থেকে। এতে ধোয়া সৃষ্টি হয়না। পরিবেশের ক্ষতি হয়না।
বর্তমানে বিশ্বের ৩১ টি দেশ এভাবে বিদ্যুৎ তৈরি করে যার ভেতর কোন কোন দেশের মোট বিদ্যুৎ এর অর্ধেক অথবা এক তৃতীয়াংশ আসে পরমাণু থেকেই।
১৯৫০ সাল থেকে এই পর্যন্ত সারা বিশ্বের ৪৫৪ টি নিউক্লিয়ার পাওয়ার রিয়েক্টর থেকে মোট ১৭,০০০ রিয়েকটর বছরের অভিজ্ঞতা মানব জাতি পেয়েছে।
এখানে একটি বিষয় না বললেই নয়, চেরনবিলে বিশফরনের জন্য গ্রাফাইট এর ওপেন এয়ার ব্লাস্ট কে দায়ি করা হয়। চেরনবিলে কোন কোর ক্যাচার টেকনলোজি ছিল না। এটি রাশিয়া চেরনোবিলের দূর্ঘটনার পর অভিজ্ঞতার আলোকে কোর ক্যাচার প্রযুক্তি আনে। রাশিয়ার বাইরে ২০০৬ সালে চীনে প্রথম কোর ক্যাচার টেকনলোজি ব্যাবহার করা হয়। উল্লেখ্য কংক্রিটের যেই কন্টেইনমেন্ট দেয়াল রয়েছে সেটি কোর ক্যাচার নয়। পশ্চিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে কোর ক্যাচার টেকনলোজি না ব্যাবহ্রত হলেও এর সমকক্ষ কিছু প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয়।
কোর ক্যাচার নিয়ে আমাদের পরবর্তী পোস্ট। ডেফ্রেসের সাথেই থাকুন।
#wasimahin
Post a Comment