মঙ্গলযাত্রার ভূত-ভবিষ্যৎ!
মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠান এলোন মাস্কের মতে লাল গ্রহ মঙ্গলে আগামী ১০০ বছরের মাঝে প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসতি স্থাপন করার সম্ভাবনা খুবই প্রবল। স্পেস এক্স মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর জন্য অনেকদিন যাবৎ কাজ করছে। এই অভিযানের জন্য তারা তৈরি করছে বিগ ফ্যালকন নামের এক রকেট দানবকে। স্পেস এক্স ছাড়া নাসা,ইসা, জাক্সার মত অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা এজেন্সীও মঙ্গলে অভিযান শুরু করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেজন্যই বোধহয় মঙ্গলে এ অব্দি সবচে বেশি মহাকাশ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। মঙ্গলে অভিযান আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। অবশ্যি মনুষ্যবিহীন অভিযান।
আর্থিক আর প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার দরুণ মঙ্গলে এখনো নভোচারী পাঠানো সম্ভব হয়ে ওঠে নি। তবে মনুষ্যবিহীন অভিযান শুরু হয়েছিল সেই ৬০ এর দশকেই। এবার অনুমান করুন তো মঙ্গলে কতগুলো অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে? সংখ্যাটা খুব বেশি না। মাত্র ৫৬টি! তবে সফল হয়েছে মোটে ২৬ টি অভিযান! এ মুহূর্তে লাল গ্রহটিতে একটি রোভার কর্মক্ষম আছে। গ্রহটির কক্ষপথে থাকা ৬টি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেটি আমাদের কাছে ক্রমাগত হরেক রকম তথ্য পাঠিয়ে চলেছে। ২০২০, ২০২২, ২০২৪ সালে আরো কয়েকটি রোবট পাঠানোর কথা রয়েছে মঙ্গলে। আর ২০৩০ সালে প্রথমবারের মত কোন মানুষের পদধূলি পড়বে মঙ্গলে।
মঙ্গলে অনেকগুলো অরবিটার পাঠানো হয়েছিল। এদের মাঝে মার্স অডেসি, মার্স এক্সপ্রেস, মার্স রিকোনাইস্যান্স অরবিটার, মঙ্গলায়ান, মাভেন, এক্সোমাস ট্রেস গ্যাস অরবিটার উল্লেখযোগ্য। মঙ্গলায়নের কথা একটু বিশেষভাবে বলতে হচ্ছে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা একটা অভাবনীয় কাজ করেছিল মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে। পুরো অভিযানের পিছনে তারা খরচটাকে স্রেফ ৭৩ মিলিয়ন ডলারের নামিয়ে এনেছিল। যেটা আনুপাতিক দৃষ্টিতে ট্যাক্সি ভাড়ার চাইতেও কম ছিল। এবার একটু রোভারগুলো নিয়ে বলা যাক।
মঙ্গলে নাসার পাঠানো প্রথম রোভারগুলো ছিল মার্স স্পিরিট অ্যান্ড অপোর্চুনিটি, যেগুলো দুই দফায় ২০০৩ সালে মঙ্গলের বুকে অবতরণ করে। এটা ছিল নাসার স্পেস প্রোগ্রামের বিরাট একটা সফলতা। মঙ্গলে পৌছাতে রোভারগুলোর লেগেছিল প্রায় ৬ মাসের মত সময়। প্রাথমিকভাবে ৯০ দিনের একটি অভিযান পরিকল্পনা করেছিল নাসা। মঙ্গলের ভূতত্ত্ব আর বায়ুমণ্ডল সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করাই ছিল রোভারগুলোর প্রধান কাজ। কিন্তু দেড় মাসেই থেমে থাকে নি তারা। মার্স স্পিরিট কাজ করেছিল ২০১০ সালের মার্চ পর্যন্ত। আর অপোর্চুনিটি তো সুপাররোভার। টিকে ছিল ২০১৮ সালের জুন অব্দি!
মঙ্গলে দ্বিতীয় রোভারটি পাঠানো হয় ২০১১ সালে। নাম কিউরিসিটি রোভার। এই নামটা আমি সর্বপ্রথম দেখি দাদার আইসিটি বইয়ে। খুব অবাক হয়েছিলাম এটা সম্পর্কে পড়ে। কিউরিসিটি কৌতুহলী ছিল মঙ্গলের প্রাকৃতিক ভূচিত্র আর সেখানকার আবহাওয়া নিয়ে। আমাদের যেটা মঙ্গলকে জানতে অনেক সাহায্য করেছে। মঙ্গলে অতি ক্ষুদ্র জীবের সন্ধানেও তৎপর ছিল কিউরিসিটি। মঙ্গলের বুকে অবতরণের পরের বছর তথা ২০১২ সালেই এটা তার কাজ থেকে ইস্তফা দেয়!
আর এখন পর্যন্ত নাসার সর্বশেষ চমক তাদের ইনসাইট ল্যান্ডার। গতবছর তথা ২০১৮ সালের নভেম্বরে ইনসাইট ল্যান্ডার মঙ্গলে মাটির পা দেয়। মঙ্গলের মাটি আর ভূকম্পন সংক্রান্ত গবেষণায় মগ্ন রবে এটি। সুখবর ইতোমধ্যেই এক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছে ইনসাইট ল্যান্ডার। এখনো অনেক দৌড় বাকি আছে এটির।
২০৪০ সালের মধ্যে আরো ১২টি অভিযান পরিচালিত হবে মঙ্গলে, যেটা মহাকাশ বিজ্ঞানের জন্য ভাল খবর।
নাসার পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে মঙ্গলে মার্স ২০২০ রোভার পাঠানো। ২০২০ সালের ১৭ই জুলাইয়ে এটিকে উৎক্ষেপণের কথা রয়েছে আর ২০২১ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতেই মঙ্গলের বুকে নামতে পারে ২০২০ রোভারটি। এস্ট্রোবায়লজি নিয়ে গবেষণা করতে এটিকে মঙ্গলে পাঠানো হবে।
এছাড়াও ২০১৮ সালের সূচি পরিবর্তিত হয়ে ২০২০ সালে আরো একটি রোভার যাবে মঙ্গলে। রোজ্যালিন ফ্র্যাঙ্কলিন নাম তার। মহাকাশ গবেষণা এজেন্সী ইসা এটা পরিচালনা করবে। এখানেই শেষ নয়।
২০২০ সালে মার্স গ্লোবাল রিমোট সেন্সিং ল্যান্ডার নামে আরেকটি রোভারের যাত্রা শুরু হবে মঙ্গলের পথে। চীনের জাতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান কেন্দ্র এই আন্তঃগ্রহীয় অভিযানের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
ভবিষ্যতের অরবিটারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মার্স টেরাহার্টজ মাইক্রোস্যাটেলাইট, মঙ্গলায়ন-২, হোপ মার্স মিশন, মার্শিয়ান মুন'স এক্সপ্লোরেশন্স।
মার্শিয়ান মুন'স এক্সপ্লোরেশন প্রোগ্রামটি পরিচালনা করবে জাপান। মঙ্গলের একটি চাঁদ ফোবোসে ২০২৪ সালে পাঠানো হবে এটি। তারপর ফোবোসে অবতরণ করে সেখানকার স্যাম্পল সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফেরত পাঠাবে সেগুলো। এখানে আসতে আসতে অবশ্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে।
তারমানে মঙ্গল নিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের সাধনা প্রায় ৬০ বছরের কাছাকাছি। আর সেটা একটা দারুণ পূর্ণতা আরো বছর দশেক পর। মঙ্গলযাত্রা এক দিনের কাহিনী নয়!
#Interstellar
মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠান এলোন মাস্কের মতে লাল গ্রহ মঙ্গলে আগামী ১০০ বছরের মাঝে প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসতি স্থাপন করার সম্ভাবনা খুবই প্রবল। স্পেস এক্স মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর জন্য অনেকদিন যাবৎ কাজ করছে। এই অভিযানের জন্য তারা তৈরি করছে বিগ ফ্যালকন নামের এক রকেট দানবকে। স্পেস এক্স ছাড়া নাসা,ইসা, জাক্সার মত অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা এজেন্সীও মঙ্গলে অভিযান শুরু করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেজন্যই বোধহয় মঙ্গলে এ অব্দি সবচে বেশি মহাকাশ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। মঙ্গলে অভিযান আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। অবশ্যি মনুষ্যবিহীন অভিযান।
আর্থিক আর প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার দরুণ মঙ্গলে এখনো নভোচারী পাঠানো সম্ভব হয়ে ওঠে নি। তবে মনুষ্যবিহীন অভিযান শুরু হয়েছিল সেই ৬০ এর দশকেই। এবার অনুমান করুন তো মঙ্গলে কতগুলো অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে? সংখ্যাটা খুব বেশি না। মাত্র ৫৬টি! তবে সফল হয়েছে মোটে ২৬ টি অভিযান! এ মুহূর্তে লাল গ্রহটিতে একটি রোভার কর্মক্ষম আছে। গ্রহটির কক্ষপথে থাকা ৬টি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেটি আমাদের কাছে ক্রমাগত হরেক রকম তথ্য পাঠিয়ে চলেছে। ২০২০, ২০২২, ২০২৪ সালে আরো কয়েকটি রোবট পাঠানোর কথা রয়েছে মঙ্গলে। আর ২০৩০ সালে প্রথমবারের মত কোন মানুষের পদধূলি পড়বে মঙ্গলে।
মঙ্গলে অনেকগুলো অরবিটার পাঠানো হয়েছিল। এদের মাঝে মার্স অডেসি, মার্স এক্সপ্রেস, মার্স রিকোনাইস্যান্স অরবিটার, মঙ্গলায়ান, মাভেন, এক্সোমাস ট্রেস গ্যাস অরবিটার উল্লেখযোগ্য। মঙ্গলায়নের কথা একটু বিশেষভাবে বলতে হচ্ছে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা একটা অভাবনীয় কাজ করেছিল মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে। পুরো অভিযানের পিছনে তারা খরচটাকে স্রেফ ৭৩ মিলিয়ন ডলারের নামিয়ে এনেছিল। যেটা আনুপাতিক দৃষ্টিতে ট্যাক্সি ভাড়ার চাইতেও কম ছিল। এবার একটু রোভারগুলো নিয়ে বলা যাক।
মঙ্গলে নাসার পাঠানো প্রথম রোভারগুলো ছিল মার্স স্পিরিট অ্যান্ড অপোর্চুনিটি, যেগুলো দুই দফায় ২০০৩ সালে মঙ্গলের বুকে অবতরণ করে। এটা ছিল নাসার স্পেস প্রোগ্রামের বিরাট একটা সফলতা। মঙ্গলে পৌছাতে রোভারগুলোর লেগেছিল প্রায় ৬ মাসের মত সময়। প্রাথমিকভাবে ৯০ দিনের একটি অভিযান পরিকল্পনা করেছিল নাসা। মঙ্গলের ভূতত্ত্ব আর বায়ুমণ্ডল সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করাই ছিল রোভারগুলোর প্রধান কাজ। কিন্তু দেড় মাসেই থেমে থাকে নি তারা। মার্স স্পিরিট কাজ করেছিল ২০১০ সালের মার্চ পর্যন্ত। আর অপোর্চুনিটি তো সুপাররোভার। টিকে ছিল ২০১৮ সালের জুন অব্দি!
মঙ্গলে দ্বিতীয় রোভারটি পাঠানো হয় ২০১১ সালে। নাম কিউরিসিটি রোভার। এই নামটা আমি সর্বপ্রথম দেখি দাদার আইসিটি বইয়ে। খুব অবাক হয়েছিলাম এটা সম্পর্কে পড়ে। কিউরিসিটি কৌতুহলী ছিল মঙ্গলের প্রাকৃতিক ভূচিত্র আর সেখানকার আবহাওয়া নিয়ে। আমাদের যেটা মঙ্গলকে জানতে অনেক সাহায্য করেছে। মঙ্গলে অতি ক্ষুদ্র জীবের সন্ধানেও তৎপর ছিল কিউরিসিটি। মঙ্গলের বুকে অবতরণের পরের বছর তথা ২০১২ সালেই এটা তার কাজ থেকে ইস্তফা দেয়!
আর এখন পর্যন্ত নাসার সর্বশেষ চমক তাদের ইনসাইট ল্যান্ডার। গতবছর তথা ২০১৮ সালের নভেম্বরে ইনসাইট ল্যান্ডার মঙ্গলে মাটির পা দেয়। মঙ্গলের মাটি আর ভূকম্পন সংক্রান্ত গবেষণায় মগ্ন রবে এটি। সুখবর ইতোমধ্যেই এক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছে ইনসাইট ল্যান্ডার। এখনো অনেক দৌড় বাকি আছে এটির।
২০৪০ সালের মধ্যে আরো ১২টি অভিযান পরিচালিত হবে মঙ্গলে, যেটা মহাকাশ বিজ্ঞানের জন্য ভাল খবর।
নাসার পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে মঙ্গলে মার্স ২০২০ রোভার পাঠানো। ২০২০ সালের ১৭ই জুলাইয়ে এটিকে উৎক্ষেপণের কথা রয়েছে আর ২০২১ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতেই মঙ্গলের বুকে নামতে পারে ২০২০ রোভারটি। এস্ট্রোবায়লজি নিয়ে গবেষণা করতে এটিকে মঙ্গলে পাঠানো হবে।
এছাড়াও ২০১৮ সালের সূচি পরিবর্তিত হয়ে ২০২০ সালে আরো একটি রোভার যাবে মঙ্গলে। রোজ্যালিন ফ্র্যাঙ্কলিন নাম তার। মহাকাশ গবেষণা এজেন্সী ইসা এটা পরিচালনা করবে। এখানেই শেষ নয়।
২০২০ সালে মার্স গ্লোবাল রিমোট সেন্সিং ল্যান্ডার নামে আরেকটি রোভারের যাত্রা শুরু হবে মঙ্গলের পথে। চীনের জাতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান কেন্দ্র এই আন্তঃগ্রহীয় অভিযানের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
ভবিষ্যতের অরবিটারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মার্স টেরাহার্টজ মাইক্রোস্যাটেলাইট, মঙ্গলায়ন-২, হোপ মার্স মিশন, মার্শিয়ান মুন'স এক্সপ্লোরেশন্স।
মার্শিয়ান মুন'স এক্সপ্লোরেশন প্রোগ্রামটি পরিচালনা করবে জাপান। মঙ্গলের একটি চাঁদ ফোবোসে ২০২৪ সালে পাঠানো হবে এটি। তারপর ফোবোসে অবতরণ করে সেখানকার স্যাম্পল সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফেরত পাঠাবে সেগুলো। এখানে আসতে আসতে অবশ্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে।
তারমানে মঙ্গল নিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের সাধনা প্রায় ৬০ বছরের কাছাকাছি। আর সেটা একটা দারুণ পূর্ণতা আরো বছর দশেক পর। মঙ্গলযাত্রা এক দিনের কাহিনী নয়!
#Interstellar
Post a Comment