আমি জৈব উপায়ে ছাদ বাগান করি বলতে গেলে কোন টাকা-পয়সা খরচ না করেই। অনেকগুলো ফলের ঝুড়ি একবারই কিনেছিলাম। সেগুলোই বারবার ইউজ করি। মাটিও একবারই কিনেছিলাম। সেই মাটি এখন দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সেই হিসাবে ফলের ঝুরি এবং মাটি এগুলো ফিক্সড খরচ।
বাসায় আমরা অনেক সবজি খাই। সেই সবজির খোসা কম্পোস্ট হিসেবে ব্যবহার করি। বাসার পাশে অনেকগুলো চায়ের দোকান এবং সিদ্ধ ডিমের দোকান আছে। এই দোকানিরা চায়ের পাতা, কলার খোসা, ডিমের খোসা ফেলে দেয়।চায়ের দোকানগুলো থেকে চা পাতা এবং কলার খোসা সংগ্রহ করি। সিদ্ধ ডিমের দোকান থেকে ডিমের খোসা নিয়ে আসি। চা পাতা, কলার খোসা ও ডিমের খোসার গুড়ো এগুলোই সার হিসেবে ব্যবহার করি। এখানেও আমার কোনো খরচ হয় না।
বিভিন্ন সময় আমরা গোস্ত খাই। সেখান থেকে হাড় সংগ্রহ করি। সেই হাড়গুলোকে ভালোমত ধুয়ে এবং শুকিয়ে গুঁড়ো করে নেই। এগুলোই হচ্ছে আমার বাগানের হাড়ের গুঁড়ো।
এই সমস্ত আইটেম মাটিতে দিলে সার হয়ে যায় এবং এক বছরের মধ্যেই সেগুলো উর্বর মাটিতে রূপান্তর হয়ে যায়। এভাবে আমার মাটিও দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
আমার ছাদ বাগানে একটি নিম গাছ ও অ্যালোভেরা গাছ আছে। এই নিম গাছের পাতা ও অ্যালোভেরা গাছের পাতা সিদ্ধ করে সেই রসটিকে কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করি। এখানেও আমার কোন খরচ হয় না।
আপনারাও একটু কষ্ট করে এভাবে ছাদ বাগান করলে প্রায় বিনা খরচেই ভালো ফলন পাবেন ইনশাআল্লাহ। আপনাদের কাজে লাগতে পারে এমন তিনটি টিপস নিচে শেয়ার করছি:-
টিপস-১: আমি যেভাবে হাড়ের গুঁড়ো বানাই-
রান্না করা গোস্ত খাওয়ার পর মুরগির হাড়, ছাগলের হাড় অথবা গরুর নরম হাড় (শক্ত হাড় না নেওয়াই ভালো কারণ সেটা গুড়া করা কঠিন) যা আমরা ডাস্টবিনে ফেলে দেই, সেগুলোকে ভালো করে ধুয়ে নিন। ধোঁয়ার সময় ছুরি দিয়ে হাড়ের সাথে লেগে থাকা গোশতের টুকরোগুলোকে ফেলে দিন। খেয়াল রাখবেন যাতে হাড়ের সাথে একটুও গোশত বা চর্বি লেগে না থাকে। হাড়ের সাথে গোশত বা চর্বি লেগে থাকলে সেটা থেকে পোকা হতে পারে।
সেই হাড়গুলোকে ভালোমতো রোদে অথবা চুলোর নিচে দিয়ে শুকিয়ে নিন। ভালোমত শুকিয়ে নেওয়ার পর এগুলোকে একটা পাতিলে দিয়ে চুলোতে আগুন দিয়ে মচমচা করে নিন। মচমচা করার কারণ হচ্ছে যাতে এটা সহজে গুড়ো করা যায়। তবে একটু খেয়াল রাখবেন যাতে হাড়গুলো পুড়ে কালো না হয়ে যায়। তারপর সেটাকে ব্লেন্ডারে গুঁড়ো করে নিতে পারেন। কিন্তু আমি হামানদিস্তায় সেটাকে গুঁড়ো করে নেই।
এই হাড়ের গুঁড়োকে অল্প পরিমাণ মাটির সাথে মিশিয়ে একটু পানি ছিটিয়ে একটা পলিথিনে বা কৌটায় রেখে দিন। এক থেকে দুই মাসের মধ্যেই এটা মাটির সাথে মিশে ফসফরাসের ভাল সার হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে আর হাড়ের গুঁড়ো কিনতে হবে না।
টিপস- ২: নিম পাতা ও এলোভেরা দিয়ে কীটনাশক তৈরি-
নিমপাতা, নিমপাতার কচি ডাল, নিম গাছের ফল ও অ্যালোভেরা পাতা ছোট ছোট করে কেটে নিন। তারপর সেটাকে পানি দিয়ে ভালোমত সিদ্ধ করুন। এই সিদ্ধ হওয়া পানি বা রসটাই হচ্ছে ভালো কীটনাশক। এই রস সমপরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিতভাবে পুরো গাছে স্প্রে করুন। যদি পোকার আক্রমণ খুব বেশি হয় তাহলে এটার সাথে কিছু পরিমাণ ডিটারজেন্ট পাউডার মিশিয়ে নিতে পারেন।
টিপস- ৩: কম্পোস্ট কিভাবে বানাই-
কম্পোস্ট বানানোর বিভিন্ন রকম পদ্ধতি আছে। ঝামেলা এড়ানোর জন্য আমি একটি পদ্ধতি অনুসরণ করি।
আমি যে ফলের ঝুড়ি বা টবে গাছ লাগাবো, সেই টবের নিচে ড্রেনেজ সিস্টেম করার পর মাটির একটা স্তর দেই। তার উপর থেকে বিভিন্ন সবজির খোসা, ফলের খোসা, কলার খোসা, ডিমের খোসার গুড়ো, হাড়ের গুঁড়ো, চা পাতা ইত্যাদি ফেলতে থাকি। ঝুরিটি পরিপূর্ণ হয়ে গেলে এক মাসের জন্য ঢেকে রেখে দেই। একমাস পরে সেগুলো কম্পোস্ট হয়ে অনেকটাই নিচে নেমে যায়। তারপর সেটার উপর চুনের গুড়ো দিয়ে হালকা পানি ছিটিয়ে দেই। চুনের গুঁড়ো দেওয়ার কারণ হচ্ছে যদি কম্পোস্টে ফাঙ্গাস থাকে তাহলে সেটা দূর হয়ে যাবে। তার উপর মাটি দেই। মাটি দিয়ে এক সপ্তাহের জন্য রোদে ফেলে রাখি। এক সপ্তাহ পর এই মাটির উপর যে কোন গাছ বপন করি। এভাবে করলে প্রতিটি আইটেম আলাদাভাবে রোদে শুকিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করার ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
Post a Comment