GuidePedia

0
ট্রেনের কোচ LHB এর জন্মঃ


১৯৯৩ থেকে ৯৪ সালের দিকে ভারতীয় রেল প্রথম ভাবনা চিন্তা করে নতুন প্রযুক্তির বেশি নিরাপত্তা যুক্ত, উচ্চ গতিতে চলতে সক্ষম কোচ ব্যবহারের কথা। জার্মান কোম্পানী LINKE HOFFMAN BUSCH কে এই দায়িত্ব দেওয়া হয় এ ধরনের কোচের নির্মাণের জন্য। তারা এই কোচের নক্সা ও প্রযুক্তি নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এবং চুক্তি হয় এই কোচের পরীক্ষামূলক চালনা সফল হলে সমস্ত প্রযুক্তি ও নক্সা ভারতীয় রেলকে হস্তান্তর করা হবে। এরপর সমস্ত সফলতার সাথে ২০০০ সাল থেকে ভারতীয় রেলপথে যাত্রা শুরু করে এই বিশেষ কোচ। ১৯৯৮ সালে ওই কোম্পানী কে কিনে নিয়েছে পৃথিবী বিখ্যাত কোম্পানী Alstom. ওই কোম্পানির নাম অনুসারেই এই কোচের নাম হয়েছিল LHB COACH. এখন একে ALSTOM LHB বলা হয়ে থাকে।[রেলওয়ে গ্যালারি পেইজের পোস্টটি লিখেছেন মানস বিশ্বাস] বর্তমানে ALSTOM INDIA LIMITED ও ভারতীয় রেলের যৌথ উদ্যোগে, ভারতের পাঞ্জাবের RAILWAY COACH FACTORY, KPURTHALA ও উত্তর প্রদেশের RAILWAY COACH FACTORY, RAIBARELI এবং তামিলনাডুর INTEGRAL COACH FACTORY, PERAMBUR থেকে নির্মিত হয় এই কোচ গুলি।




এই কোচের বিবিধ সুবিধাগুলি হলো –

১) অন্যান্য কোচের মত সাধারণ ইস্পাতের বদলে শুধুমাত্র উচ্চমানের স্টেইনলেস স্টীল দিয়ে নির্মাণ করা হয় এই কোচের বাইরের অতি মজবুত দেওয়াল। আর ভেতরের দেওয়াল তৈরি হয় মূলত উচ্চ মানের সেমি স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে। এতে কোচ মজবুত ও হয় সঙ্গে হালকা ওজনের হয়। ফলে উচ্চ গতিতে চলতে সক্ষম। এই কোচকে ঘণ্টায় ২০০ কি.মি. বেগেও চালানো সম্ভব। যদিও ভারতে পরীক্ষিত গতি ঘণ্টায় ১৮০ কিমি।

২) এই কোচের দৈর্ঘ্য প্রচলিত ICF COACH বা PT INKA BANGLADESH PASSENGER CAR এর থেকে ১.৭ মিটার বেশি লম্বা। তাই এই কোচের সীট সংখ্যা বেশি, প্রয়োজনীয় ফাঁকা জায়গা বর্তমান, করিডর চওড়া বেশি। চেয়ার কারে সীট সংখ্যা ৭৮ টি।

৩) এই কোচ চলাকালীন উৎপন্ন শব্দের ডেসিবল মাত্রা কোচের ভেতরে ৬০ ডেসিবল এর কম। ফলে শব্দ দূষণ কম।

৪) বাইরের তাপ ভেতরে কম ঢোকার জন্য POLYEURETHANE জাতীয় তাপ রোধে সক্ষম ফোমের স্প্রে ব্যবহার করা হয় । উচ্চ স্থিতিস্থাপকতা যুক্ত EPOXY জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করে ভেতরের দেওয়ালের বাইরের ফ্রেমে মোটা স্তর তৈরি করা হয়। এই ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে তাপ রোধ বৃদ্ধি ও বিভিন্ন রাসায়নিক ক্ষয় প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।[রেলওয়ে গ্যালারি]

৫) এছাড়াও দরজার সঙ্গে যুক্ত ফ্লাস ব্যবস্থার দ্বারা বাইরের দেওয়াল স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার করা সম্ভব।

৬) জানলাগুলি (বাতানুকুল কোচে) দ্বিস্তরীয়। বাইরের দিকের কাচের ওপর প্রতিফলন সক্ষম পদার্থের স্তর বর্তমান এবং ভেতরের কাঁচটি বিশেষভাবে তাপ রোধে সক্ষম। এছাড়াও দুই কাঁচের মাঝে আর্গন গ্যাস ব্যবহার করা হয় তাপের পরিবহনের অতিরিক্ত অন্তরায় ব্যবস্থা হিসেবে। এছাড়াও জানলার সঙ্গে পর্দার পরিবর্তে ROLLER BLINDS নামক এক বিশেষ ধরনের SUN PROTECTION FABRIC ব্যবহার করা হয়।[রেলওয়ে গ্যালারি]

৭) কোচের মেঝে RUBBER সহযোগে CORK PANNEL ও MEKORE কাঠ দ্বারা গঠিত ১৬ মি.মি. পুরুত্বের বোর্ড নির্মিত। ফলে মেঝে তাপ ও শব্দ শোষক হিসেবে কাজ করে তার সঙ্গে। এছাড়াও এই বোর্ড বিশেষভাবে অগ্নি নিরোধ করার মত করে প্রস্তুত করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের মেঝে অত্যন্ত শক্ত, বেঁকে যাওয়াকে প্রতিরোধ করতে পারে ও ঘর্ষণ ও কম্পনে কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই মেঝের ওপর PVC MAT পাতা থাকে।

৮) ভেতরের দেওয়ালের নীচের অংশে MINERAL MAT ব্যবহার করা হয় জল বয়ে যাওয়া ঠেকাতে। তাছাড়াও ওপরের দেওয়াল ও ছাদে ANTI- TRICKLING COAT থাকে কোনো ছোট জলের প্রবাহ বা চুঁইয়ে পড়া জল আটকাতে।[রেলওয়ে গ্যালারি]

৯) কোচের ভেতরের এই অন্তর্সজ্জা বেশিরভাগই আগুন কম ছড়ায় এমন জিনিস দিয়েই নির্মিত। তাই অগ্নি সংযোগে কম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদিও কোচে একাধিক অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বর্তমান।

১০) কোচের বাতানুকুল যন্ত্র ছাদের সঙ্গে সংযুক্ত এবং MICROPROCESSOR CONTROLLED. ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আর্দ্রতা, গ্রীষ্মের তাপ, শীত কালের তাপ অনুযায়ী তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

১১) কোচের ভেতরে জল সরবরাহের জন্য ২ টি ইস্পাত নির্মিত জলাধার রয়েছে। যাদের মোট ধারণ ক্ষমতা ১৩৭০ লিটার। ৩ টি TOILET WITH EUROPEAN AND ORIENTAL STYLE আছে, যাদের প্রত্যকের জন্য ৩০ লিটার জলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাঙ্ক রয়েছে।



[রেলওয়ে গ্যালারি]

Post a Comment

 
Top