৩০** সিরিজ (GT38AC) নিয়ে কিছু গুরুত্বপুর্ন তথ্য
আপনারা সকলেই জানেন সম্প্রতি ১০ নতুন লোকোমোটিভ বাংলাদেশে চলে এসেছে রোটেম, কোরিয়া থেকে । আসার আগে থেকেই এবং আসার পরপর অনেক পজিটিভ আর নেগেটিভ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে চলে এসেছে । আমি চেস্টা করলাম আসলে সঠিক তথ্য কি তা জানার । এর জন্যে ঢাকার আব্দুল গনি রোডে অবস্থিত রেল ভবনে কয়েক জন উচ্চ পদস্থ রেল কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করলাম । বেশ কিছু জিনিস শিখলাম যা আগে জানতাম না । যা তথ্য পেলাম তা কিছু সন্নিবেশিত করে আপনাদের পেশ করলাম । আমরা এত দিন জানতাম অনেক ভুল তথ্য যা অনেক না বুঝে প্রচার করে ভাইরাল করেছে । চলে দেখে আসি আসলে এক লোকো গুলো কি !!!
একটা মিস- কমুনিকেশনে ভুল অর্শ শক্তি দেখানো হয়েছে । বাংলাদেশেই লোকোর গায়ে অর্শ শক্তি উল্লেখ থাকে, অন্য দেশে নয় । দেশ থেকে যা লেখা পাঠানো হয় তাই লোকো প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান লিখে থাকে । ভুল তথ্যের কারণে MEI - 15 লেখা হয়েছে । আর একটা কথা 8-710G3B-ES মডেলের ডিজেল ইঞ্জিন যা বাংলাদেশের আগে কোন লোকোমোটিভে ছিল না যা এবার বাংলাদেশের আগমন ঘটেছে ৩০** সিরিজ লোকোমোতিভের মাধ্যমে । আরও বলে রাখছি ৪০ টা ব্রড গেজ লোকোমোটিভ যা আমেরিকার প্রগ্রেস রেল থেকে আনা হচ্ছে সেটাই একই টাইপের ইঞ্জিন শুধু ১২ সিলিন্ডারের, 12N-710G3B-EES। এই মডেলের ইঞ্জিনের কখনো ১,৫০০ অর্শ শক্তির লোকো হয় না । আমাদের ৩০** সিরিজ ২,২০০ অর্শ শক্তির, ১,৫০০ না । আশা করি এটা ঠিক করা হবে ।
আর একটা গুরুত্তপুর্ন জিনিস শিখলাম । অর্শ শক্তির পুরাটা ট্রাকশনে ব্যবহার হয় না । কিছু অংশ অক্সিলিয়ারি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার হয়ে থাকে । এটা সব লোকোতে প্রযোজ্য । সেরকম ৩০** সিরিজের লোকোতেও ২০০ এর মত অর্শ শক্তি অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয় । আর বাকি ২,০০০ ট্র্যাকশনে । আপনারা কিলোওয়াট (Kw) আর হর্স পাওয়ার (HP) সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন । কিলোওয়াট আর হর্স পাওয়ার (HP) এক নয় । ১ কিলোওয়াট = ১.৩৪ হর্স পাওয়ার (অর্শ শক্তি) । চেক করে দেখেন আপনাদের লিস্টে দেওয়া আছে ১,৪৯১ কিলোওয়াট যা আপনারা অর্শ শক্তি মনে করেছে । তাহলে ১,৪৯১ কিলোওয়াট = ১,৯৯৭.৯৪ হর্স পাওয়ার (অর্শ শক্তি) । বাকি পাওয়ার আনুসাঙ্গিক সরঞ্জামে ব্যবহৃত হয় । ২৯,** সিরিজেও সেরকম, ১৫৫ হর্স পাওয়া অন্য কাজে ব্যবহৃত হয় আর বাকিটা ট্র্যাকশনে ।
আর গতি নিয়ে কনফিউশনে আছে অনেকে । আপনার যে লিস্ট দেখাচ্ছেন তা হোল ইন্দোনেশিয়া তে প্রগ্রেস রেল এর সরবরাহকৃত ৫৫ টা GT38ACe লোকোমোটিভের টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন, বাংলাদেশের জন্যে না । এগুলো ইন্দোনেশিয়া ডেডিকেটেড ফ্রেট লোকোমোটিভ হিসেবে আমদানি করেছে, প্যাসেঞ্জার লোকোমোটিভ নয় । গিয়ার রেসিও ভিন্ন । এদের সর্বোচ্চ গতি ৮০ কিলো/ঘন্টা । আমাদের লোকো গুলোতে অতি সহজেই ১০০ কিমি /ঘন্টা উঠে যাবে (যদিও আমাদের ট্র্যাক পারমিট করবে না) । বলে রাখা ভাল ফ্রেট লোকো গুলো এক লোকো দিয়ে ৪৮ টা কয়লা (Coal) হপার টানতে সক্ষম । ২ লোকতে ৮০ টা । ইন্দোনেশিয়া এবছর আরও ৩৬ টা একই লোকো আমদানি করার চুক্তি সাক্ষর করেছে যা ২০২১ সালের শেষের দিকে আসবে ।
অনেকের লম্বার কথা বলেছেন । GT38ACe এর জেনারেল লেংথ ১৮,৯৪২ মিমি যা ৬২ ফিটের কাছাকাছি । অনেক লম্বা । ইচ্ছা করেই লম্বা করা হয় নাই । এটা GT38ACe এর স্টান্ডার্ড লেন্থ । ইচ্ছা করে বাড়ানো হয় নাই । তবে লং হুডে চালানো প্রব্লেমেটিক হবে । বলা হয়েছে আমাদের পরে কিছুটা ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ করতে হবে কারণ এগুলো করার সময় আন্তর্জাতিক মাপ গুলো ফলোও হয় নাই মনে হয় । আর টার্ন-টেবিল গুলো কিন্তু ব্রিটিশ আমলে তৈরি, বিশেষ করে স্টিম লোকো ঘুরানোর জন্যে । তখন এত লম্বা লোকোমোটিভ তৈরি বা মডেল ছিল না । এখন দেখি রেল কি ব্যবস্থা নেয় । কারণ সামনে মিটার আর ব্রড গেজ উভয় লোকোর জন্যে বেশি জায়গা দরকার হবে (আমরা এতে সমালচনায় না যাই)
আর ট্র্যাকশন মটরের কথা অনেকে বলছেন । শুনলাম আমাদের মিটার গেজ ট্র্যাক ১০৮ মে টন মিটার গেজ লোকোর ওজন পারমিট করে না। ডুয়েল গেজে অসুবিধা নাই । ১২০ + মেঃ টন হলেও অসুবিধা নাই । তাই ২ টা ট্র্যাকশন অফ করে আনা হয়েছে । এতে নাকি লোকোর কোন অসুবিধা হবে না, এসি মোটর, খুব তাড়াতাড়ি স্পিড আপ হবে । এক্সট্রা খরচ নাকি হবে না এনার্জি বেশি লাগবে না । যাক আমি প্রকৌশলী না, লে-ম্যান । যা পেলাম তা বললাম ।
অনেকে মনে করেছিলেন এসি ক্যাব হবে। আসল GT38ACe তে এসি লিখা দেখে অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছেন । আসলে এতে এসি মটর বুঝানো হয়েছে । আগের লোকো গুলোতে ডিসি মোটর ব্যবহার হচ্ছে ।
তবে ডিজাইনের ব্যপারে ব্যাখ্যা তে আমি সন্তুস্ত নই । এটা নাকি কোরিয়ান দের বিজনেস পলিসি । তারা GT38ACe এর ডিজাইনে পরিবর্তন এনেছে । আমরা কি পারতাম না অরিজিনাল GT38ACe ডিজাইন অক্ষুন্ন রাখতে ? ইন্দোনেশিয়া কিন্তু অরিজিনাল ডিজাইনের লোকো প্রগ্রেস রেল থেকে এনেছে । এত মনে হচ্ছে চালকদের লোকোমোটিভ অপারেটিং এ কিছু টা অসুবিধা হবে । সামনের ভিউ ভাল না । ফ্রন্ট গ্লাস বেশ উঁচুতে । আপনারা সাইড উইন্ডো আর ফ্রন্ট উইন্ডো দেখলেই বুঝতে পারবে কত উচু । মনে হচ্ছে কম উচ্চতার করুদের কিছুতে অসুবিধার সম্মুখিন হতে হবে । আসলে ভিতরে না বসলে বুঝা যাবে না ।
কোরিয়ান প্রকৌশলী দের চট্টগ্রাম আসার সিডিউল আগামী ১৩ তারিখ । এসেই তার কাজ শুরু করবেন । পাহারতলিতে তাদের জন্যে ২ টা রুম রেডি করা হয়েছে ।
কাজ চলছে আরও ২০ টা অনুরুপ লোকোমোটিভের । এগুলো কিন্তু মাইক্রো প্রসেসসর সম্বলিত হবে যা প্রথম ১০টা তে নেই । এসি ক্যাবের ব্যপারে আমি কনফিউসড । আসলে বুঝা যাবে । আগামী বছরে আমাদের রেলের বহরে জুক্ত হবার সম্ভাবনা আছে ।
শুনলাম এই মডেলের লোকো গুলো খুবই মান সম্পন্ন । সবার উচ্চ ধারনা আছে এই লোকো সম্বন্ধে । ভাল - মন্দ মিলিয়ে এই লোকো । সব ভাল পাবেন না । কিছুটা মনের খচ খচানি থাকবেই । আশা করি লোকো সংকটে এই লোকো গুলো আমাদের ভাল সার্ভিস দিবে বহি বছর । সেই আশায় থাকলাম । আর একটা কথা যা পেলাম তা দিলাম, কিছু চেঞ্জ পেলে অবশ্যই বলে দিব ।
ক্রেডিট - মোঃ নাজমুল ইসলাম
ছবি- সংগৃহীত
Post a Comment