ইতালি ভিসাঃ সম্ভাবনা, সংশয় ও সতর্কবার্তা
গ্রুপের সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা। আমরা অলরেডি জেনে গেছি গত ০৭ জুলাই ২০২৩ এ ইতালি সরকার নতুন ডিক্রেটু ফ্লুসি আপডেট করেছে। আগে আমরা জানতাম ২০২৩-২০২৫ এই সময়ে তারা ২.৫ লাখ অভিবাসী নিবে ওয়ার্ক ভিসা’র আওতায়। এখন তারা আবার ২.২ লাখ কোটা বাড়িয়ে টোটাল ৪.৫২ লাখ লোক নেয়ার ঘোষনা দিয়েছে। অতএব বলা যায়, আমাদের জন্য নতুন আশার দুয়ার খুলে গেলো। একটু ধৈর্য্য আর সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে অনেক লোকের আগামি ২ বছরে ইউরোপ স্বপ্ন পূরন হবে।
যা জানা দরকারঃ
১। এই মূহুর্তে এপ্লাই করার যে প্লাটফর্ম সেটা অফ আছে। সো নতুন করে এপ্লাই করবেন না এখন। সরকার ক্লিক ডে ডিক্লেয়ার করার পর নতুন করে এপ্লাই করবেন।
২। এপ্লাই করার সময় অনেকে টাকা পয়সা চায় এডভান্স, একচুয়ালি কিছু টাকা ওখানে খরচও হয়। কিন্তু আপনি এডভান্স করার সময় আপনার রিস্ক টা খেয়াল রাখবেন। যেমন, কারোর অফিস থাকলে অফিসে গিয়ে ডিল করুন, ৩০০ টাকার সরকারী স্ট্যাম্প এ ডিড করুন। কারো অফিস না থাকলে তাঁর বাসা চিনে রাখুন। অবশ্যই ডিড করবেন। আপনার টাকার হক সম্পূর্ণ আপনার। এ ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকুন।
৩। ক্লিক ডে এর পর থেকে ২ মাস এর মধ্যে নুলা ওস্তা না পেলে ধরে নিবেন, আপনার ভিসা পাওয়ার পসিবিলিটি আস্তে আস্তে কমতে থাকে। অতএব, যার সাথে কাজ করবেন, তাকে অবশ্যই বলবেন, আমি ২ মাসের মধ্যে নুলা ওস্তা না পাইলে আমার টাকা ফেরত দিবেন। বাড়তি অপেক্ষা করবো না।
৪। এপয়েন্টমেন্ট এখন অনেক কঠিন হয়ে গেছে, সুতরাং, নুলা অস্তা পাওয়ার পর, কালক্ষেপন না করে নিজে নিজে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিবেন। আমি এ ব্যাপারে বিস্তারিত একটা প্রেজেন্টেশন রেডি করে দিবো, কিভাবে নিজের এপয়েন্টমেন্ট নিজেই নিতে পারেন।
৫। সব পেপারস ঠিক থাকলে সিজনাল ভিসা আপনি জমা দেয়ার ২-৭ কর্মদিবসেই পেয়ে যাবেন, স্পন্সর পেয়ে যাবেন ২-২০ কর্মদিবসের মধ্যেই। এর মধ্যে না হলে আপনার এজেন্ট কে প্রশ্ন করবেন। প্রেসার দিবেন।
৬। ভিসা পাওয়ার পর বিএমইটি কার্ড করবেন। এর জন্য প্রথমেই আপনার নিজ জেলার জনশক্তি অফিস এ গিয়ে তিন দিন এর ট্রেনিং নিবেন ও চতুর্থ দিন ফিংগার প্রিন্ট দিবেন। তারপর তাদের সার্টিফিকেট নিয়ে যেকোন রিক্রুটিং এজেন্সি কে দিলে তারা আপনার কার্ড করে দিবে। সময় লাগবে ৩-৭ দিন।
৭। ভিসা হয়ে যাওয়ার পরেই হাতে সময় নিয়ে টিকেট রেট চেক করে বুকিং দিয়ে ফেলবেন। একটু সময় নিয়ে টিকেট করলে এখানে খরচ বাচে, তাড়াহুড়ো করলে অনেক সময় ৫০/৭০ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়ে যায়।
৮। ইতালি ভিসাগুলো তে ম্যাক্সিমাম সময় ঐখানে রিসিভ করা, অথবা কাজ দেয়ার ব্যাপারে কোন ডিল থাকে না! ভাল হয় ইউরোপে আপনার পরিচিত কেউ থাকলে, অন্তত শুরুর দিকে ৪/৫ দিন সাহায্য পাওয়া যায়। না থাকলেও অসুবিধা নাই, আপনি খুঁজলে কেউ না কেউ পেয়ে যাবেন। শুরুর ২-৩ দিন কাটিয়ে দিলে দেখবেন আপনি নিজেই আস্তে আস্তে সব বুঝে যাচ্ছেন।পকেট পয়সা ঢুকলে এম্নিতেই মাথা খুলে যায়!
৯। কাগজপত্র সবসময় ২/৩ সেট ফটোকপি রাখবেন, ১ সেট ফুল স্ক্যান করে রাখবেন। তাইলে যেকোন প্রয়োজনে কাজে লাগবে।
১০। ইতালি রওনা দেয়ার সময় ৫০০/১০০০ ইউরো বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যায়েন ব্যাকআপ হিসেবে। পকেটে টাকা থাকলে মনে সাহস বেশি থাকে। আমি ত প্রায় ই বলি, আমার মানিব্যাগ আর মোবাইল থাকলে আল্লাহ সহায় হলে আমি পৃথিবীর যেকোন জায়গায় দিনগুজার করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
১১। অনেকে যাওয়ার আগে উড়াধুড়া শপিং করেন। এটা করবেন না। বরং ঘরে পড়ার হালকা কাপড় চোপড় বেশ নেন। ওখানে যাওয়ার পর অবস্থা বুঝে যা যা লাগে কিনতে পারবেন।
১২। ইতালি তে অলরেডি অনেক বাংলাদেশি থাকে। যাওয়ার আগে চেষ্টা করবেন ঐ কমিউনিটির সাথে কিভাবে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
১৩। অনেকে ইতালি না গিয়ে সরাসরি অন্য ইউরোপিয়ান দেশে যায় যেখানে তাদের রিলেটিভ থাকে। কোন সমস্যা নাই। জাস্ট ইতালি ইমিগ্রেশন শেষ করে ঐ এয়ারপোর্টেই টিকেট কেটে আপনি অন্য দেশে চলে যেতে পারবেন, অথবা এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে ট্রেনে অথবা বাসেও যেতে পারবেন। নো ইস্যু এট অল।
১৪। ঐখানে গিয়েও চোখ কান খোলা রাখুন। আমাদের দেশে যেমন অনেক দালাল আছে আপনাকে বেচে খাওয়ার জন্য, ঐখানেও অনেকে ফাঁদ পেতে আছে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।
১৫। ইউরোপ সবার জন্য না! ইউরোপ ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কাউন্ট্রি। যারা একটু স্মার্ট, মোটামুটি সবকিছুর সাথে সহজে মানিয়ে নিতে পারার অভ্যাস আছে, একদম গোবেচারা না তারা ইউরোপ নিয়ে ভাবেন। অতি ডেসপারেট হয়েন না, ডেসপারেট হইলে মানুষ আপনার কাছ থেকে সুযোগ নিবে। আপনার ভাব টা থাকবে এমন, আমি যাইতে পারলে ভাল, না পারলেও টেনশন নাই, হাতে সময় আছে, পরে যাবো। আর যদি আপনি এমন দেখান যে না গেলে আপনি শেষ.
Post a Comment