আমার মনে হয়, আমার স্ট্যাটাসগুলো নিয়ে আপনারা বিরক্তবোধ করেন, কারণ লেখা লেখি ক্ষেত্রে আমার একটি বদঅভ্যাস! সেটি হচ্ছে যেকোন উসিলায় আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা গল্পের ছলে বলে যাওয়া।
বিরক্ত হলে ক্ষমা করবেন। এই দেখুন না আজকে পেয়ারা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেও নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা না উল্লেখ করে মনে শান্তি পাচ্ছিনা।
আমাদের অঞ্চলে ( সিলেট মন্ডলে) তেমন উন্নত জাতের পেয়ার ফলন আগে যেমন ছিলোনা এখনো তেমন নেই। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো বাণিজ্যিক ভাবে পেয়ারার চাষ হচ্ছে বলেও তেমন কোন খবর পাইনি।
আমাদের এলাকায় বাসা বাড়িতে দেশী ছোট ছোট সাইজের পেয়ারার গাছ দেখা যায়, সেই সবের বীজ বেশী মাংস কম থাকে, মাঝেমধ্যে ভিতরে লাল রঙের পেয়ারা দেখা যেতো, পেয়ারাকে আমরা হপরি বলে থাকি। লাল রঙের পেয়ারাকে সৈয়দি হপরি বলি।
আগের আমলে মুকন্দপুরি নামক পেয়ারা বছরে একবার বা দুইবার খাওয়া হতো যদিও তা অন্যান্য অঞ্চল থেকে আমদানি হতো।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ থেকে একটি আপেল পেয়ারার চারা এনে বাড়িতে লাগিয়েছিলাম। প্রথম দুই এক বৎসর দুই একটি ফল খেতে পারলেও এখন আর খাওয়া হয়না, পেয়ারাগুলো এনথ্রাক্স নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
তো বুঝতে পারছেন, আমার জীবনের দীর্ঘকাল পেয়ারা খাবার তেমন অভিজ্ঞতা নেই। কারণ পেয়ারাকে বেমজাদার ফল হিসাবেই আমি অবমূল্যায়ন করতাম।
এতকাল আমার দাঁতে তেমন কোন সমস্যা ছিলোনা এ
,
তবে বছর দেড়েক আগে উপরের পাটির বামদিকের দাঁতে জিহ্বা, আংগুল, কিংবা ব্রাশের টাচ লাগলেই শিরশির করতো, কিছু চিবাতে অসুবিধা অনুভব হতো, চিবাতে পারতামনা । এর জন্য ডেন্টিসের কাছে গেলাম। ১২ শতটাকা দিয়ে স্কেলিং করে দিলেন, কিন্তু যেই সেই কমেনি তো আরো বেড়ে শিরশির করা।
বিকালে অফিস থেকে এসে হাত মুখ ধুয়ে কিছু নাস্তা করার অভ্যাস, আমাদের ঘরে এই সময় জাংকফুড ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়না, যা খেলে ওজন বেড়ে যায়। আরো নানাবিধ অসূখ বিসূখ আক্রান্ত হতে হয়।
বিকল্প নাস্তার অনুসন্ধান করতে গিয়ে, কাসুন্দ দিয়ে পেয়ারা খাবার সিদ্ধান্ত নেই। যেই ভাবা সেই কাজ, কাসুন্দে যে তেঁতুল থাকে, তা জানতামনা যার ফলে দাঁতের শিরশির করা আরো বেড়ে যায়। ফলে কাসুন্দ বাদ দিয়ে বীট লবণ লাগিয়ে পেয়ারা খেতে থাকি, দেড় বছর ধরে আমার বিকালের নাস্তা পেয়ারা দিয়ে করে নিচ্ছি।
আশ্চর্যের বিষয়, পেয়ারা খাবার তিন চার মাসের মধ্যে আমার দাঁতের শিরশির /চিনচিন বা শিনশিন করা এখন আর নাই। একদম হাওয়া! দাঁত এখন পাত্থরের মত মজবুত হয়ে গেছে, বুঝতে পারছি এই সব পেয়ারা খাবার শুভফল!
মানুষ জন দাঁতের জন্য ডাক্তারের কাছে গিয়ে কত টাকা খরচ করে অথচ প্রতিদিন একটি পেয়ারে খেতে পারলে দাঁতের রোগের জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগতোনা।
আমার স্ত্রী যখন বাংলাদেশে আসে, তখন সে আমাদের মৌলভীবাজার শহরের বাসায় বসবাস শুরু করে, আমাদের এলাকার মানুষ আগে কখনো কাঁচা পেয়ারা খেতে অভ্যস্ত ছিলো না। খুব সম্ভবত সে যখন বাংলাদেশে প্রথম পেয়ারা খেয়েছিল, তারা মুকন্দ পুরি পাকা আর নরম পেয়ারা খেয়েছিল। এবং সে পেয়ারা সে পছন্দ করেছিলো।
পরে যখন ঢাকায় এলাম, তখন একদিন হাইব্রিড কাঁচা পেয়ারা বাসায় নিয়ে এসেছিলাম। কাঁচা পেয়ারা দেখে সে কি ওয়াজ শুরু করলো আমার অবস্থা ছেড়ে দে মা কাইন্দা বাঁচি। বলল কি সাংঘাতিক তুমি কাঁচা পেয়ারা নিয়ে এসেছো? তুমি জানোনা ফল কাঁচা খেলে কি ক্ষতি হয়?
যতই বলি যে পেয়ারা কাঁচা খেতে হয়। সে মানতেই চায়না। বলে দোকানী তোমাকে হাদারাম পেয়ে কাঁচা পেয়ারা গছিয়ে দিয়েছে। বললাম ঢাকার লোকেরা তো কাঁচা পেয়ারা খায়। বলল যে খায় খাক, আমি খাবোনা আর আমার বাচ্চাদের খেতেও দেবোনা।
কি আর করা দীর্ঘ অনেক বছর আমার বাসায় পেয়ারা কিনে আনিনি।
বছর দেড়েক আগের যখন আবার কাঁচা পেয়ারা এনে খেতে শুরু করি, তা দেখে আমাকে নিয়ে কত হাসাহাসি করেছে।
একদিন আমার ভাইকে আমার দাঁতের শিনশিন চলে গেছে, আর তা গেছে পেয়ারে খেয়ে সে কথা ফোনে জানাই, সে কথা আমার স্ত্রী শুনতে পায়।
আমাকে জিজ্ঞাস করে সত্যি পেয়ারা খেয়ে তোমার দাঁতের শিনশিন চলে গেছে? বললাম হ্যা তাই।
আমার স্ত্রী আবার সব সময় দাঁতে ব্যথায় কষ্ট পায়, কিন্তু সে বাংলাদেশের কোন মেডিসিন খায়না, কাজেই দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পায়না। যখন শুনেছে যে কাঁচা পেয়ারা খেলে ব্যথা চলে যায়। তখন থেকে আমার অগোচরে কাঁচা পেয়ারা খেতে শুরু করে, পরে প্রায়ই আমাকে মনে করিয়ে দেয়, তোমার পেয়ারা শেষ, আগামীকাল বাজার থেকে আনতে হবে।
কি বুঝলেন? মানে উনারও দাঁতের ব্যথা পেয়ারাজি সেরে দিয়েছেন। এখন তিনি পেয়ারার ভক্ত! অথচ আমি কত উপহাসের পাত্র হয়েছিলাম।
পেয়ারা শুধু সুস্বাদু নয় পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফলও বটে।
বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অনেক দেশে প্রায় ১০০ প্রজাতির পেয়ারা উৎপাদন হয়ে থাকে। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশসমূহ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহে পেয়ারা উৎপাদিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, রাংগামাটি কুমিল্লা সহ বিভিন্ন জেলায় এখন বাণিজ্যিক ভাবে পেয়ারা চাষ হচ্ছে।
আমাদের দেশে পেয়ারাই একমাত্র ফল যা বারোমাস পাওয়া যায়।
তবে এখন বাজারে ৬০-৮০ টাকা দর কেজি পাওয়া গেলেও অফ সিজনে ১৫০/১৬০ টাকা দর কেজি পাওয়া যায়।
পেয়ারাতে যে সব রাসায়নিক আর খনিজ উপাদান পাওয়া যায়,
১- কার্বোহাইড্রেট
২- প্রোটিন
৩- ভিটামিন এ বি আর কে
৪- পটাশিয়াম
৫- ম্যাগনেসিয়াম
৬- ফসফরাস সহ আঁশ,পানি, আর খনিজ পদার্থ।
নিয়মিত পেয়ারা খেলে যে সকল রোগের প্রকোপ কমিয়ে দিতে বা নিরাময় করতে পারে।
১- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
২- হজম ক্রিয়া শক্তিশালী করা
৩- শরীরে নানা ধরণের ইনিফেকশনের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
৪- রক্ত ভালো রাখে, তাই হার্টের রুগীদের প্রতি দিন পেয়ারা খাওয়া উচিত।
৫- এজমা ঠাণ্ডা কাশি নিরাময় করে
৬- শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে
৭-মূখের রুচি বর্ধক
৮- পেটের সমস্য দূর করে, ল্যুজ মোশন নিয়ন্ত্রণ করে।
৯- ত্বক চুল আর চোখের উপকার করে
১০- ত্বকের রুক্ষ্ম ভাব দূর করে
১১- পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ ময়েশ্চার থাকার কারণে যারা পেয়ারা নিয়মিত খাবেন তাদের তারুণ্যকে দীর্ঘদিন ধরে রাখবে।
১২- শীতের সময় পা ফাটা রোধ করবে
১৩- ডায়াবেটিক, ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সারের মত জটিল রোগ প্রতিরোধের সহায়ক।
১৪- দাঁত ও মাড়ির উপকার করে।
আপনি কি জানেন? ৪টি কমলার মধ্যে যে পুষ্টিগুণ থাকে, সে পরিমাণ পুষ্টিগুণ ১টি পেয়ারার মধ্যে পাওয়া যায়। আর প্রচুর ভিটামিন সি তো আছেই।
আমাদের উচিত প্রতিদিন একটি করে পেয়ারা খাওয়ার।
শুধু পেয়ারা নয় পেয়ার পাতার তৈরি চাও শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। আবার পেয়ারার ডাল পুড়িয়ে যে কয়লা হয় সে কয়লা গুড়ো করে দাঁতের মাজন তৈরি করা যায়। যা দাঁতের জন্য খুব উপকারী। তবে প্রতিদিন পেয়ারা খেলে কারো কারো কুষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
ধন্যবাদ।
তথ্য আর ছবি নেট থেকে সংগৃহীত।
Post a Comment