GuidePedia

0
একটি সত্য যুদ্ধের  কাহিনী

১ লা নভেম্বর ২০১৫ সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম নিয়ে বেসরকারি অংগনে একটি মেডিকেল কলেজে হাস্পাতালের পরিচালক  পদে যোগদান। সকাল ৮ টায় যখন প্রবেশ করি দেখি প্রতিষ্ঠান এর মেইন গেট রশি দিয়ে বাধা, আউটডোর এর গেইটের এক অংশ বন্দ দরজার হেন্ডেল দড়ি বাধা। নোংরা দুর্গন্ধ ও এক ৪র্থ শ্রেনীর নেতার দাপুটে আচরন।কোথায়ও কোন শৃংখলা নেই। ৫ টা পরিত্যক্ত বিল্ডিং বিল্ডিং এ ২০ ফ্লোরে অনিরাপদ পরিবেশ রোগী থাকে। ফোম বা বিছানা মিনিমাম স্টান্ডার্ড এর না। খাবার থেকে গন্ধ আসে।খাবার নিয়প হাইকোর্ট ৩ বছর কেইস চলছে।ডসইটের কোন টেন্ডার হচ্ছে না। অফিসের কাজে কোন ডক্যুমেন্টস নেই।টেন্ডার ডকুমেন্টস গুলো কোন নিয়ম মেনে তৈরী হয়নি। প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাক্ষর নেই।এক টেন্ডার দিয়ে পাঁচ বছর কাজ দেওয়া হচ্ছে বিধি বহির্ভূত ভাবে।৮ তলা নুতন বিল্ডিং এর কয়েক তালায় দরজা, বেসিন,কমোড, অক্সিজেন লাইন চুরি হয়ে গেছে। সার্ভিস চার্জের যৌথ সাক্ষরে উঠানো হয়। কোন অডিট নেই।হাসপাতাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির  মিটিং ৩ বছরে হয় নি।অধিকাংশ ঔষধ বাইরে থেকে স্লিপ এ আনা হয়।সবাই এক এক জন পরিচালক। বাৎসরিক ইউজার ফি ৫ কোটি টাকার কম সরকারের ঘরে জমা হয়।তখন হাসপাতালের সবাই খুশি ছিল।এম আর,আর ল্যাব মালিক দের মাসিক ভিত্তিতে উপহার অনেক লেভেলেই যেত। খাওয়া দাওয়া আসতেই থাকে ফার্মাসিটিকিউল কোম্পানি থেকে।দালাল ও আয়া,স্পেশাল আয়া দের বদলীতে ৪থ শ্রেনীর নির্দেশনা থাকত।আউট ডোরের টিকেটের লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যাক্তিগত সম্পত্তি হয়ে গিয়েছিল। এখানে পোস্টিং কৃত অধিকাংশ বিভিন্ন  পর্যায়ের অধ্যাপক সপ্তাহের ২/৪ দিন ঢাকায় অবস্থান করেন। কিন্তু কাগজে কলমে হাজির থাকেন সব সময় কর্মস্থলে।

এ গুলোর পরিবর্তন করার জন্য অনেক পেশাজীবি নেতা, কলেজের প্রভাব শালী পদে কাজ যারা করেন তারা আমাকে পছন্দ করেন না।আরো অনেকেই পছন্দ করেন না মেডিকেল ইঞ্জুরী সার্টিফিকেট বানিজ্য বন্ধ হওয়ার কারনে।জবাবদিহিতা কেউই অন্তর থেকে পছন্দ করেন না।

২০১৫ সালে ইনডোর এ রোগী থাকত গড়ে ১৩০০ জন।এখন ২৯০০জন।আগে আউট ডোরে রোগী থাকত ২০০০ জন।এখন ৬০০০ জন গড়ে।আগে আউট সোর্সিং৷ এর কোন কর্মচারী ছিল না।ক্লিনিং সার্ভিসের কর্মচারী ছিল ১২৮ জন।তাদের বেতন ছিল ১৪০০ থেকে ২৮০০ টাকা  এখন একজন কর্মচারী নুন্যতম ৭০০০ টাকা বেতন পান।২০১৮_১৯ অর্থ বছরে সরকারের ঘরে ১২ কোটি টাকা ইউজার ফি জমা হবে ইনশাআল্লাহ।

আমাদেরকে সীমিত সম্পদ দিয়ে সার্ভিস দিতে হয় এটা সত্য। রোগী  ও এটেন্ডেন্ট মিলিয়ে প্রায় ১৫০০০ মানুষ প্রতিদিন হাসপাতালে বিচরণ। সব মানুষ এক পরিবেশ এ বড় হয় না।তাদের জ্ঞান ও সমান নয়।রোগীরা আরো সচেতন হলে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা আরো ভাল হবে।

সব পেশায় সবার আচরন সমান নয়।আমি আদর্শ পরিবেশে ও সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে পারি নি।সবাইকে অতিরিক্ত রোগীর চাপ নিতে হয়। তাই ইচ্ছা না থাকলেও অনেক সময় অনাখাংকিত ঘটনা ঘটতে পারে।আমাদের নিশ্চিত করতে হবে আমরা যেন ইতিবাচক পরিবেশ তেরী করে আমাদের ভুল কমিয়ে আনতে পারি।যে কোন অবহেলা কে আমি খতিয়ে দেখি এবং নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নেই।

আমি একমাত্র আল্লাহর আজাবের ভয়ে ভীত থাকি বলেই বিনয় প্রকাশ করি।কে কি বলল এটা আমি জনস্বার্থে হলে গুরুত্ব দেই।

প্রশংসা আল্লাহর প্রাপ্য। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সকল কষ্ট সহ্য করি।আমার সামর্থ্যের সব টুকু দিয়ে আমি ৩ বছর ৭ মাস শত প্রতিকুলতা এড়িয়ে চেস্টা করেছি সবাইকে নিয়ে হাসপাতালের উন্নয়ন ও সেবার উন্নয়ন করতে।

বিচারের ভার আল্লাহর উপর।

কোন পেশাজীবি নেতা বা রাজনৈতিক নেতা বা অন্য কোন ক্ষমতা ধর গোষ্ঠী কে আমি বখরা বা স্পিড মানি দিব না।আমি সরকারের অনুগত কর্মচারী। আমি যতদিন দায়িত্বে থাকব ততদিন আল্লাহর ক্ষমতা ও রহমত এর সাহায্য এবং আজাব কেই ভয় করেই কাজ করে যাব।আল্লাহই আমার একমাত্র অভিভাবক।

লেখক,

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন
পরিচালক
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ

Post a Comment

 
Top